ফজলুল হক, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
“আমরা দেশ গড়ার কাজে নেমেছি, দেশকে সুন্দর করে গড়বো’ ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো, আগামীর ইনসাফের দেশ গড়বো” এমন নানা প্রতিপাদ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়ক-মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা।
পুলিশের অনুপস্থিতিতেও সুশৃঙ্খল ও সুসজ্জিত সড়ক গড়ার পাশাপাশি তারা মাদক ও চাঁদাবাজ রোধেও নানা ভুমিকা পালন করে।
এতে প্রসংশায় ভাসছেন গোটা শিক্ষার্থীরা। এদিকে গত রোববার রাতে পুলিশ তাদের কর্মস্থলে ফেরায় স্বাভাবিক হচ্ছে পরিবেশ ও জনমনে ফিরছে স্বস্তি।
এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, পরিবহন শ্রমিক-যাত্রী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট রাতে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হঠাৎ করেই কালিয়াকৈর থেকে থানা, হাইওয়ে, জেলা ও ট্রাফিক পুলিশ চলে যায়। পরের দিন ৫ আগস্ট একই আন্দোলনের তোপের মুখে পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু পুরোপুরি পুলিশ শূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামেন শিক্ষার্থীরা।
অরক্ষিত হয়ে পড়ে কালিয়াকৈর। “আমরা দেশ গড়ার কাজে নেমেছি, দেশকে সুন্দর করে গড়বো’ ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো, আগামীর ইনসাফের দেশ গড়বো” এমন নানা প্রতিপাদ্যেকে সামনে রেখে দিনরাত সড়ক ও মহাসড়কে ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
পুলিশের অনুপস্থিতিতেও সুশৃঙ্খল সড়ক-মহাসড়ক উপহার দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে তারা আন্দোলনে নিহত শহীদ শিক্ষার্থীদের স্মরণে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, দেয়ালে দেয়ালে একতাই বল, বীর বাঙালির অহংকার, শ্লোগান, জাতীয় পতাকা, সংগ্রাম, ঐক্য, দুর্নীতি বাংলাদেশের মানচিত্রসহ প্রাণ প্রকৃতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একাধিক মুহুর্তসহ নানা বিষয়ে গ্রাফিতি আঁকছেন। এছাড়াও সড়ক ও মহাসড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা থেকে দেশের সংস্কারে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এমন উদ্যোগে ধীরে ধীরে সড়ক-মহাসড়ক আরো সুসজ্জিত হচ্ছে।
অপরদিকে পুলিশের অনুপস্থিতিতেও সুশৃঙ্খল ও সুসজ্জিত সড়ক-মহাসড়ক উপহারের পাশাপাশি মাদক ও চাঁদাবাজ রোধেও নানা ভুমিকা রাখছেন শিক্ষার্থীরা। গত রোববার শিক্ষার্থীদের অভিযানে সাবেক ইউপি সদস্য হাসিনা আক্তারসহ হোটেল ব্যবসায়ী ফাতেমা আক্তার, মিরাজ হোসেন ও সজিব হোসেন নামে চার মাদক ব্যবসায়ীকে আটক হয়। তাদের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধারের পর চন্দ্রা হাইওয়ে পুলিশ বক্সে বেঁধে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে উদ্ধারকৃত গাঁজা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এছাড়াও চাঁদাবাজী রোধে শিক্ষার্থীরা মাইকিং করলে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়ন্টে চাঁদাবাজ মুক্ত হয়। এক চাঁদাবাজকে আটক করে কান ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশবিহীন চাঁদাবাজ মুক্ত সড়ক পেয়ে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন অটোরিকশা চালকসহ বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকরা। এসব কার্যক্রম চালিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রোববার রাতে পুলিশও কালিয়াকৈর থানায় তাদের কর্মস্থলে ফিরে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছে। সপ্তাহখানেক কর্মবিরতি শেষে পুলিশ কর্মস্থলে ফেরায় স্বাভাবিক হচ্ছে পরিবেশ ও জনমনে ফিরছে স্বস্তি। তবে মহাসড়কের কালিয়াকৈর অংশে এখনো হাইওয়ে, জেলা ও ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অটোরিকশা চালক জানান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ভুমিকায় আমরা খুব খুশি। আসলে পুলিশ ছাড়াই মহাসড়ক খুব ভাল আছে। কোথাও জামেলা নাই, শান্তিতে অটো চালাচ্ছি। এখন আর মাসে ২ হাজার ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে না। শুধু অটোরিকশাই নয়, বিভিন্ন পরিবহনে দেদারছে চলে চাঁদাবাজী।
সরেজমিনে কথা হয় সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্বরত কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কারীর সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আশা করি ভবিষৎ ছাত্র সমাজের কাছে দেশ চলে আসছে। কোন মাদক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব থাকবে না।
কালিয়াকৈর বিনির্মাণে কাজ চলছে। তবে আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করবো কালিয়াকৈর পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন সুন্দর নগর হিসেবে গড়ে তোলবো।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম বলেন, কর্ম বিরতি শেষে আমরা কালিয়াকৈর থানায় কর্মস্থলে ফিরেছি। ইতিমধ্যে সীমিত পরিসরে থানা পুলিশের কার্যক্রম চলছে। ধীরে ধীরে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এখন এখানকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা খুব ভালো কাজ করেছেন। তারা বলেন্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মাদকসহ শিক্ষার্থীরা যাদের আটক করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও পুলিশ তাদের কর্মস্থলে ফিরেছে। তবে আশা করি দু-একদিনের মধ্যে ট্রাফিকের দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনায় মনোযোগী হবেন।

Discussion about this post