বহুতর ঐশ্বর্যে ভরা কুষ্টিয়ার কয়া গ্রাম। শিলাইদহ ছেউড়িয়া আর কয়া হলো কুষ্টিয়ার প্রাণ।
এই কয়ায় জন্মেছিলেন বিখ্যাত বিপ্লবী বাঘা যতীন। তার মা শরৎশশী দেবী ছিলেন কবি ও লেখক। তার লেখা গ্রন্থ সেই যুগে আলোড়ন তুলতো। কলকাতা থেকে কবি সাহিত্যিকেরা আসতেন তার সাক্ষাৎকার নিতে। বিপ্লবী বাঘা যতীনের বোনেরও লেখক পরিচিতি ছিল।
এতো গেল এক বিখ্যাত পরিবারের কথা। দৈনিক দেশতথ্য পত্রিকার এই কলামে এবার বলি এক অখ্যাত ব্যাক্তির কথা। এই অখ্যাত ব্যাক্তির নাম শাবান ঘোষ।
নায়িকা শাবানার বিয়েতে দই সরবরাহ করে কয়া গ্রামের এই ঘোষ রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। পরে ওই ঘোষের নাম হয়ে যায়, শাবান ঘোষ।
এসব গল্প উঠেছিল গতকাল বিকেলে। কয়া গ্রাম’ স্বপ্নভূমি’র সুতিকাগার। স্বপ্নভূমি হচ্ছে স্বপ্নবাজ কয় সহোদরের স্বপ্ন বিকিকিনি ও বিনিময়ের কেন্দ্র। তাদের প্রাণপুরুষ ডক্টর রকিবুল হাসান। নায়কের ভূমিকা নিয়েছে কনিষ্ঠজন মিলন হাসান।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2021/10/FB_IMG_1634406119609.jpg)
তারা সাহস করে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আবার নতুন স্বপ্ন দেখে। তাদের এই স্বপ্নের দোকান খোলা থাকে। তারাও জাগ্রত থাকে। ব্যাপারটি অসাধারণ।
তারা ঢাকা থেকে যখন বাড়িতে আসে তখন তাদের কয়া গ্রাম সেজে ওঠে। তারা সাজিয়ে তোলে। বাড়ি সামনে শামিয়ানা। ছাদে রঙিন কাপড়ের ঘের। কাপড়ের গেট। খাওয়াদাওয়ার ধুন্ধুমার আয়োজন। কাচারি ঘরে সুধীজন আসছেন। উষ্ণ অভ্যর্থনা আর আপ্যায়ন চলছে। টানা তিন চার দিনের এই যজ্ঞের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিন ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যার আগে আগে গিয়ে দেখি প্রাঙ্গনে কয়েকজন অতিথি বিদায় নিচ্ছেন। কয়েকজন এসে হাজির হলেন। তাদের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কৃতি অধ্যাপক ড. সরওয়ার মোর্শেদ ও তার একসময়ের ছাত্র ও সহকর্মী অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান। ড. রকিবুল হাসান জানালেন, ভেতরে বিশ্রামরত কুষ্টিয়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুর রশীদ চৌধুরি, কবি ও গবেষক বিলু কবীর। পরে তারাও উঠে এলেন। মনে হচ্ছিল ওই কাচারির সবাই হোস্ট।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2021/10/FB_IMG_1634406123872.jpg)
আমার সঙ্গী চুয়াডাঙ্গা সদরের কৃষি কর্মকর্তা, ইউটিউবে জনপ্রিয় চ্যানেল কৃষি বায়োস্কাপের পরিচালক তালহা জুবাইর মাসরুর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট আহসান হাবিব ও চুয়াডাঙ্গা সদরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল হক রাসেল। ভিন্ন পরিবেশে কুষ্টিয়ার জনসাংস্কৃতিক এই আবহ তাদেরকেও অনরকমভাবে প্রাণিত করেছে।
আলোচনা খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি শেষে বিদায় পর্বে ড. রকিবুল আহ্বান জানালেন তাদের কাচারিবাড়ির ছাদ ভ্রমনের। সেখানে রীতিমত এক যজ্ঞ। একটি মঞ্চ ঘিরে সঙ্গীত সহযোগী বাজক, শব্দযন্ত্রী, কারিগরী কর্মীর উৎসবমুখর পসরা। নগর বাউল খ্যাত শফী মণ্ডল এখানে স্থানীয় এক সাধারণ মানুষ। তিনি গান ধরলেন “বুকের মানিক আয় রে আমার বুকে”। বড় ভাই বুলবুলের অকাল প্রয়াণের পর শোকবিহ্বল ছোট ভাই মিলন হাসান গানটি রচেছেন।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2021/10/FB_IMG_1634406135200.jpg)
সুর ও সঙ্গীত আয়োজন করেছেন শাফি মণ্ডল। চোখ বুজে মনে হলো শোক বিহ্বল বারী সিদ্দিকী গাইছেন উকিল মুনশী সেই গান ‘শুয়া চান পাখি’। মন ভারী হয়ে এলো। এক লহমার জন্য ওপরে উঠে গেঁড়ে বসে গেলাম। পর পর তিনটি গান। শেষ গানটি গাইলেন ক্লোজ আপখ্যাত শিল্পী লায়লা। সঙ্গীত, ভক্তি আর উচ্ছলতার গেরো একে একে খুলতে শুরু করলো। আমরা উঠে এলাম সবটুকু পিছুটান রেখে।
রাতে আসর আরো জমেছিল। ঢাকা থেকে বহু অতিথি গিয়ে জমেছিলেন কয়ায়। স্বপ্নভূমিতে।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/১৬ অক্টোবর /২০২১/
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post