শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা (খুলনা):
পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষক চ.দা) ও শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী শিক্ষক ২ জনকে বহিষ্কার ও তাদের অনুগত আরো ২ সহকারী শিক্ষককে শো-কজ করেছেন সভাপতি।
বহিষ্কার করা হয়েছে আরো এক অফিস সহকারীকে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান অর্ধবাষিকী পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। চলমান সংকট উত্তরণ ও সভাপতির হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে রবিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে কপিলমুনি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঘটনার শিকার ৪ শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষক চ.দা.) এম এম হাফিজুর রহমান অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বহু বিতর্কিত ও দূর্নীতিগ্রস্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস। এর আগে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী পদত্যাগ করে চুপিসারে পালিয়ে যান। এরপর তৎকালীণ সভাপতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ শাহজাহান আলীও পদত্যাগ করেন। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের পরামর্শ, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ও বিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষকের ১৪ জনের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বার্থে প্রধান শিক্ষক (চ.দা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এম হাফিজুর রহমান।
এরপর সাবেক প্রধান শিক্ষক কতৃক গত ১২ জানুয়ারী ২৫’ এর অনলাই আবেদন (আইডি নং-৩০৬৪৮) এর প্রেক্ষিতে গত ৩/১২/২৪ তারিখের ৩৭. ১১. ৪০৪১. ৪৪১. ০০. ০০১. ২০. ৩৪ নং স্মারকে অনুমিত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নি বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা ২৪ এবং প্রবিধান ৬৪ এর উপ-প্রবিধান (১) এর অধিনে খুলনা সরকারি পাইওনিয়র মহিলা কলেজের অধ্যাপক ড. মো: মোকাররম হোসেনকে বোর্ড কতৃক মনোনয়ন দিয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেয় পত্র ইস্যুর তারিখ হতে পরবর্তী অধিক ৬ মাসের জন্য।
এরপর অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে ড. মো: মোকাররম হোসেন শুরুতেই সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুণর্বাসনে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষক চ.দা.) এম এম হাফিজুর রহমানসহ অ্যাডহক কমিটির অন্যান্য সদস্য ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন। এমনকি তিনি গত ২১/০৫/২০২৫ তারিখে বিদ্যালয়ে এসে মতবিনিময় সভার নামে এক জররী সভার আয়োজন করেন। এদিন তিনি কোন প্রকার এজেন্ডা ছাড়াই সভা শেষে নোটিশ খাতা ও রেজুলেশন বহি নিজ ব্যাগে করে নিয়ে চলে যান। এরপর গত ২৩/০৬/২০২৫ তারিখে তিনি পুনরায় স্কুলে এসে কোন প্রকার কারণ ছাড়াই অ্যাডহক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রকাশ ঘোষকে নোটিশ খাতায় স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করান। বার বার রেজুলেশন ও এজেন্ডা বিহীন নোটিশ খাতায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করান। এতে সদস্য সচিবসহ অন্যান্যরা অনীহা প্রকাশ করলে তাদের সাথে সভাপতির মতদ্বন্দ শুরু হয়। এরপর তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দেখে নিতে নানাবিধ হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেন।
একপর্যায়ে তিনি গত ২৪ জুন সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এম হাফিজুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক প্রকাশ ঘোষ (শিক্ষক প্রতিনিধি) কে শো-কজ ও অফিস সহকারী সুভাষ মন্ডলকে বহিষ্কার করেন। ২৬ জুন অভিভাবক প্রতিনিধি মারফত শো-কজ পত্র প্রাপ্তির পর ৩ জুলাই সহকারী প্রধান শিক্ষক এর জবাব দিলেও তা আমলে না নিয়ে সভাপতি গত ১০ জুলাই তাকে ও শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী শিক্ষক প্রকাশ ঘোষকে সাময়ীক বহিষ্কার একই দিন সহকারী শিক্ষক নাজমুন্নাহারকে সহকারী প্রধান শিক্ষক (চ.দা.) হিসেবে স্থলাভিষিক্ত ও অ্যাডহক কমিটিতে অপর সহকারী শিক্ষক রেবেকা সুলতানাকে কো-অপ্ট করেন। একই দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ও মঙ্গলবার তারিখ ঘোষণা করেন। এছাড়া তাদের অনুগত অপর দু’ সহকারী শিক্ষক অনিশ চক্রবর্তী ও সুরঞ্জনা রায়কেও শো-কজ করেন। এরপর ১৩ জুলাই তদস্থলে সহকারী শিক্ষক নাজমুন্নাহারকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে (চ.দা.) দায়িত্বভার বুঝে দিলে তৈরি হয় নতুন সংকট। এদিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা থাকলেও নানা সংকটে বন্ধ হয়ে যায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির একজন অভিভাবক সদস্য শেখ আব্দুল মতিনকে সাথে নিয়ে সভাপতি
সাবেক পদত্যাগ করা প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ফিরিয়ে নানামুখী অপতৎপরতা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
যেমন ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনায় সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে সম্পৃক্ত করে অবৈধভাবে যৌথ অপারেটর নিয়োগ দেন। এর আগে তাকে সদস্য সচিব দেখিয়ে সভায় সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্যদের শো-কজ ও বহিষ্কার করেন।
তিনি বলেন, পদত্যাগের পর তাকে ফেরাতে হলে অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। তবে তিনি না করে স্বপন বিশ্বাসকে সদস্য সচিব দেখিয়েই অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্কুল পরিচালনায় আজকের সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, অ্যাডহকের সভাপতি কোন ক্রমেই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীদের বোর্ডের পূর্বানুমতি না নিয়ে দন্ড আরোপ করতে পারেননা। এরপরও তিনি তা করেছেন, তারমানে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে এম এম হাফিজুর রহমানকে মেনে নিয়েছেন। পক্ষান্তরে তার উপর দন্ডারোপ করে সাথে সাথে সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন বিশ্বাসকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পৃক্ত করছেন। একই সময়ে সাংঘর্ষিক নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে মূলত বিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংকট উত্তরণে যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এর আগে সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এমনকি সরকারি পাঠ্যপুস্তক বিক্রিসহ বহুবিধ অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এমনকি বিদ্যালয়ের ১৬ জন সহকারী শিক্ষকদের ১৪ জন একসাথে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে। একপর্যায়ে ক্যম্পাস উত্তাল হয়ে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ স্কুল ক্যাম্পাসে মানববন্ধন চলাকালীণ গত ১৯ ফেব্রুয়ারী স্বপন কুমার বিশ্বাস শারীরীক অসুস্থ্যতা ও ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে অতি গোপনে চুপিসারে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পস ত্যাগ করেন। এদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের তৎকালীণ সভাপতি শেখ শাহজাহান আলী তার পদত্যাগপত্র গ্রহন করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন।
তিনি অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ড. মো: মোকাররমের হাত থেকে বিদ্যালয় ও হঠকারীতার শিকার শিক্ষকদের রক্ষায় তদন্তপূর্কত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Discussion about this post