মো.আলাউদ্দীনঃ শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় উৎসব শুভ মধু পূর্ণিমা তথা ভাদ্র পূর্ণিমা।
হাটহাজারীতে বৌদ্ধদের এই পবিত্র ধর্মীয় উৎসব মহাসমারোহে উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহন করা হয়েছে।
জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা মহাকারুনিক গৌতম বুদ্ধ ৫৮০ অব্দে বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশস্হ এলাহাবাদ হতে ১২ মাইল উত্তর পশ্চিমে কৌশাম্বী নাম একটি সুসমৃদ্ধশালী নগরে তাঁর জীবনের ৯ম বর্ষাবাস অতিবাহিত করেন। তখন সেখানে একটি বিষয় নিয়ে দুই জন বৌদ্ধ ভিক্ষুর মধ্যে বিরোধ হয়। সেই বিরোধ নিয়ে দুই ভিক্ষু বুদ্ধের কাছে যায় মিমাংসা জন্য। তখন তিনি দুই ভিক্ষুর বিরোধ নিষ্পত্তির নানা উপদেশ প্রদান করেন । কিন্তু এক ভিক্ষু বুদ্ধের সেই উপদেশ না মানলে তিনি (বুদ্ধ) সেখান থেকে পরিল্যেয় নামে বনে চলে যান। সেই বনে তিনি ১০ম বর্ষাবাসব্রত শুরু করেন। সেখানে বর্ষাবাস শুরু করলে বনের হাতি তাঁকে (বুদ্ধকে) সেবা প্রদান করেন। হাতির সেবা কার্যক্রম অবলোকন করে তির্যক প্রাণী বানের মনেও বুদ্ধকে সেবা করার মানসিকতা উৎপন্ন হয়। বানরের বুদ্ধকে সেবা করার মানসিকতা উৎপন্ন হলে ও দান দেওয়ার মত বানর কিছু না পেয়ে একটি মৌচাক বানর বুদ্ধকে খাওয়ার জন্য বন থেকে এনে দান দিলেন। কিন্তু বুদ্ধ সেই মৌচাক থেকে মধু না খাওয়ায়, বানর সেই মৌচাক নিয়ে দেখেন মৌচাকে পোকা রয়েছে। বানর সেই মৌচাক নিয়ে পোকা সরিয়ে নিলে বুদ্ধ সেই মধু পান করেন। বানর তার প্রদত্ত মধু বুদ্ধ পান করতে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি করতে গিয়ে মৃত্যু বরন করেন। সেই দিনটি ছিল ভাদ্র পূর্ণিমা। এই পূর্ণিমা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর নিকট মধু পূর্ণিমা হিসাব খ্যাত।
বৌদ্ধদের এই পবিত্র ধর্মীয় উৎসব শুভ মধু পূর্ণিমা মহাসমারোহে উদযাপনের জন্য চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আওতাধীন ১৫ টি বৌদ্ধ বিহার তথা মন্দিরে দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। এ উপলক্ষে মধ্যম মাদার্শা সার্বজনীন শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিশ্ব শান্তি প্যগোডা, জোবরা সুগত বিহার, গৌবিন্দ ঠাকুর স্মৃতি মন্দির, মীরেরখীল চন্দ্রপুর বেনুবন বিহার, রুদ্রপুর ধর্মরত্ন বিহার, গুমানমর্দ্দন শান্তি বিহার গুমানমর্দ্দন সার্বজনীন নালন্দা বিহার, গুমানমর্দ্দন ধর্মচক্র বিহার, বালুখালী জগৎ জ্যোতি বিহার, মির্জাপুর শান্তিধাম বিহার, মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহার, গুমানমর্দ্দন আরিয়া ওয়ানচা আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, পশ্চিম ধলই উদালিয়া শান্তি নিকেতন বিহারে কর্তৃক গৃহীত পৃথক পৃথক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোরে পবিত্র ত্রিপিটকের মঙ্গলবানী পাঠ, ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ। জাতীয়, ধর্মীয় ও স্ব স্ব সংগঠনেরপতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ পূজা, মধু দান, পঞ্চশীল ও উপসতশীল গ্রহন, ভিক্ষসংঘ উপসতশীলধারীদের মধ্যান্ন ভোজন, মধু পূর্ণিমার তাৎপর্য শীর্ষক ধর্মীয় আলোচনা, সীমিত পরিসরে আলোকসজ্জা, বুদ্ধ কীর্তন, প্রদীপ, গিলানো প্রত্যয়, বৈশজ্যিক পূজা, সমবেত প্রার্থনা, দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি ও সার্বিক মঙ্গল কামনায় পূন্যদান ও সমবেত উপাসনার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষিত হবে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী বৌদ্ধ কল্যান পরিষদ।
এদিকে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার তথা মন্দিরে আজ শুক্রবার অনুদানের চেক বিতরন করবেন রুদ্রপুর ধর্মরত্ন বিহারে বেলা তিনটায়। তাছাড়া আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন মহাসচিব পন্ডিত শ্রীমৎ শান্তপদ মহাস্থবির ৩৫তম স্মরণ সভা,অষ্টপরিস্কার সহ সংঘদান অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯ টায়, মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারের নান্দনিক ধর্মানন্দ মিলনায়তনে।
বিহার পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডিপ্লোমা কৃষিবিদ অনুপম বড়ুয়া এই অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//৯ সেপ্টেম্বর-২০২২
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post