হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
১৯৭১সালের ৯ ডিসেম্বর এই দিনে নাজিরহাট হানাদার মুক্ত হয়েছিলো। সেই দিন থেকে এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। আজও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে হানাদার মুক্ত এবং গণহত্যা দিবস উপলক্ষে খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিল,পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খতমে কোরআন ও দোয়া মোনাজাতের শেষে শহীদদের সমাধীতে পুস্পস্তবক অর্পণের পরই শুরু হয় আলোচনা ও স্মৃতিচারন সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান।
এ উপলক্ষ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আলমের সভাপতিত্বে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ এর সঞ্চালনায় ফরহাদাবাদ ইউনিয়নস্থ নাজিরহাট পুরাতন বাস স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বেলা ১২ টার দিকে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরী, ডেপুটি কমান্ডার মো.হোসেন মাস্টার, জহুর আহমদ, আবুল কালাম, নুরুল হুদা, আবু তালেব, মাহমুদুল হক, নুরু, ফয়েজ আহামেদ, জহুর আহমেদসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সেদিন উত্তর চট্টগ্রামের রণাঙ্গন নাজিরহাটে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়, এদিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটে। পাক হানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিকামী ছাত্রজনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ উল্লাস। দিনভর ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানেরা চাঁদের গাড়িতে করে কামান এবং অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেশের মানচিত্র অংকিত পতাকা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হয়। সেই দিন ওখানে চলছিল বিজয়ের উৎসব। গোপন সংবাদ পেয়ে পলাতক পাক হানাদার বাহিনী সন্ধ্যায় হাটহাজারীর অদুদিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে ৩/৪ টি বাসে করে নাজিরহাটে আসে। তারা উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনতার উপর অতর্কীত হামলা চালায়। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।
এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার নায়েক তফাজ্জল হোসেন (বরিশাল),সিপাহী নুরুল হুদা(কুমিল্লা), সিপাহী অলি আহম্মদ (খুলনা),সিপাহী নুরুল ইসলাম (সন্দ্বীপ), সিপাহী মানিক মিয়া (চট্টগ্রাম), ফোরক আহম্মদ (নাজিরহাট), হাসিনা খাতুন (নাজিরহাট), আবদুল মিয়া (নাজিরহাট), নুরুল আবছার (কুমিল্লা), মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক (ফরহাদাবাদ) ও অজ্ঞাতনামা একজনসহ ১১জন শহীদ হন।
হাটহাজারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো.নুরুল আলম জানান, পাক হানাদার বাহিনী ঐদিন ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাজিরহাট, ফটিকছড়ি এবং হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, নাজিরহাট হালদা নদীর সেতু ধ্বংস, হত্যাযজ্ঞসহ নারকীয় কর্মকান্ড চালায়। পাক বাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে শহীদ ১১জনকে নাজিরহাট বাসষ্টেশনে কবর দেওয়া হয়। প্রত্যেক বছর নাজিরহাট মুক্ত দিবসে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির মুক্তিযোদ্ধারা শহীদের এ কবরে পুষ্প অর্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তারিক//দৈনিক দেশতথ্য//ডিসেম্বর ০৯,২০২৪//

Discussion about this post