শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট:
তিস্তার দূর্গম চরে এবার ব্যাপক ভাবে গম ও ভুট্টা চাষ হয়েছে। শত বছরের ইতিহাসে এবারে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরগুলোতে পলিমাটির একহাটু কাদার আস্তর পড়েছে। যাহা গম ও ভুট্টাসহ নানা ফসল চাষের উপযোগিতা সৃষ্টি করেছে।
এই কাদামাটির আস্তরনের কারনে তিস্তা সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারেজের উজান মুখের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর নাব্যতা শুষ্কমৌসুমে শতভাগ হারিয়ে ফেলেছে।
তিস্তা নদীর ব্যারেজর উজান হতে প্রায় ৮৫ কিলোমিটারে কোথাও তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নেই। ফালগুন মাসে তিস্তায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য খাল। সেই খাল গুলো দিয়ে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ পায়ে হেঁটে পাড়াপাড় করছে। এমন কি তিস্তা নদীর বুক চিঁড়ে হাটু পানিতে ছুটে চলতে দেখা গেছে ঘোড়ার গাড়ি।
রংপুর বিভাগের আট জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে তামাক চাষে নিরুসাহিত করতে গম ও ভুট্টা চাষাবাদ প্রকল্প গ্রহন করেছিল কৃষি বিভাগ। বাস্তবে তার প্রতিফলন মাঠপর্যায়ে দেখা যায়নি। ব্যাপক তামাক চাষ হয়েছে। এমন কি তিস্তার চরেও এবার পলিপড়ায় তামাক চাষ হয়েছে। তার পরেও তিস্তার চরের কৃষককে গম ও ভুট্টা চাষ করতে দেখা গেছে। লালমনিরহাট কৃষি বিভাগে তিস্তা চরের জন্য পৃথক কৃষির কোন হিসেব নেই। কারন তিস্তা নদী রংপুর বিভাগের রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে। প্রতিটি জেলায় তিস্তা নদীর বিশাল বিশাল চর রয়েছে। সকল চরে গম ও ভুট্টা সহ প্রায় সকল ধরনের ফসল চাষ হয়েছে। এবছর লালমনিরহাট জেলায় গম চাষ হয়েছে মাত্র ৯৩৫ হেক্টর ফসলের জমিতে। তার প্রায় ৫০ ভাগ হয়েছে তিস্তার চরে। এসব জমি হতে প্রায় তিন হাজার ৯১০ মেঃটন গম উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে গম ফসলের মাঠ হতে উত্তোলন শুরু হয়েছে। চলবে আরো ১০ দিন পর্যন্ত। জেলায় ভুট্টা চাস হয়েছে ৩২ হাজার ৯১০ মেঃটন জমিতে। ভুটা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ২৯ হাজার একশত মেঃ টন। চাষাবাদের উপকরন সারা, বীজ, জৈবসার, কিটনাশক, সোলার প্যানেল, সৌরবিদ্যুত ছিল সহজলভ্য। তাই কৃষক চরে কৃষিকাজ করতে উৎসাহিত হয়েছে। এবারে চরের ফসলের মূল্যও পেয়েছে কৃষক। ভারতের জলবিদ্যুত কেন্দ্রের বাঁধভেঙ্গে তিস্তায় পলি পড়ে ফসল ফলালেও তিস্তা পাড়ের কৃষক খুশি হতে পারেনি। তারা এটাকে অভিশাপ হিসেবে দেখছে। কারন তিস্তায় পলি পড়ায় তিস্তা এখন সম্পূর্ণ মৃত একটি নদী। হারিয়ে ফেলেছে জীববৈচিত্রতা। নদী কোন মাছ নেই। নেই কোন জলজপ্রাণি। পলিপড়ে তিস্তা ব্যারেজের প্রবেশ মুখ হতে উজানে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার নদী ভাটির চেয়ে তিন – চার ফিট উচু হয়ে গেছে। একারনে তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষকে বর্ষা মৌসুমে ভুগতে হবে। ভারতীয় পানির ঢলে তিস্তা নদীর দুই কূল উপচে পানি লোকালয়ে পৌঁচ্ছে সৃষ্টি হবে বন্যা। ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবরের এমন ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা পাড়ের প্রায় একশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে লালমনিরহাট জেলায়।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//