মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারীঃ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
মঙ্গলবার (৭ মে) বেলা ১২ টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সির হাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট এলাকার কিছু অংশে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এদিকে আমাবশ্যার জোঁ; তিথিও শুরু হয়েছে। ইংরেজি এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত মৌসুম। মৌসুমের আমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় আর এতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্ত দীর্ঘদিন বৃদ্ধিপাত না হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে দুইটি তিথি চলে গেলেও গত এপ্রিল মাসে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়িনি। গতকয়দিন থেকে দিনের বেলায় ও রাতে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি বিভিন্ন স্হানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাছাড়া গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দমকা হাওয়া, বজ্রসহ প্রবল বর্ষন হওয়ায় হালদা নদীতে ঢলের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজনিনে মঙ্গলবার হালদা নদীর বিভিন্ন স্হানে গিয়ে ডিম আহরনকারীদের ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। প্রতি নৌকায় এক/ দেড়/ দুই বালতি ডিম পেয়েছে বলে ও জানান ডিম সংগ্রহকারীরা। এই নমুনা ডিম মা মাছের ডিম ছাড়ার পূর্ব আলামত বলেও জানান ডিম সংগ্রহকারীরা। তাই তারা প্রত্যেকে ডিম সংগ্রহের নৌকা ও ডিম আহরনের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউস) মাছ ডিম ছাড়ে। ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটিতে এবার ডিম ছাড়ার ১টি উপযুক্ত সময় চলে গেছে। এখন পর্যন্ত হালদায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি কার্প জাতীয় মাছ।
ডিম সংগ্রহে নিয়োজিতরা বলছেন, এ বছর এপ্রিল মাস চলে গেলেও মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাব্য সময়গুলোর মধ্যে ৪ থেকে ৮ মে আগেই নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এছাড়াও আগামী ১৬ থেকে ২২ মে, ১ জুন থেকে ৬ জুন, ১৬ জুন থেকে ১৯ জুন হালদা নদীতে পুরোদমে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নয়ারহাটকুম এলাকার বাসিন্দা ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর জানান, গতকাল সোমবার দুপুর ২টা থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা ভারী ও হালকা বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের কারণে হালদা নদীতে জোয়ার আসাই মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। আজ রাতে পরিবেশ অনুকুলে আসলে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও হালদা গবেষক ড. মো.শফিকুল ইসলাম জানান,
জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হালদার মৎস্য সম্পদের উপর। এর প্রভাবে বিগত কয়েক বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের (এল নিনোর প্রভাব) ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা (৫০ বছরের মধ্যে অধিক) ও ব্রজসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বিগত এপ্রিল মাসের দুটি তিথীতে/জো’তে (অমাবস্যার ও পূর্ণিমার) ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান জানান, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে হালদায় এবার আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে। এদিকে নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য সরকারি হ্যাচারিগুলো ইতিমধ্যে সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post