ডুমুরিয়ার সৌরভী মন্ডল খুনের রহস্য উদঘাটন। আড়াই বছর ভারতে আত্মগোপন শেষে এলাকায় ফিরেই ধরা পড়লো খুনি প্রণব মন্ডল। সুদের কারবারের জেরেই খুন হয়েছিলেন সৌরভী মন্ডল
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2022/06/Dumuriya-sourovi-010622.jpg)
বলাবুনিয়া গ্রামের সৌরভী মন্ডল
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পশ্চিম বলাবুনিয়া গ্রামের সৌরভী মন্ডল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে খুলনা পিবিআই। গত দু’দিন আগে (৩০ মে) এ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি প্রণব মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে। জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক মো: আজহারুল ইসলাম।
বুধবার (১ জুন) দুপুরে এ সংক্রান্ত খুলনা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই এর মুখপাত্র সৈয়দ মোশফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নিহত সৌরভী মন্ডল পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একজন মাঠ কর্মী ছিলেন। এছাড়া তিনি সুদের ব্যবসাও করতেন। হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রণব মন্ডল সৌরভী মন্ডলের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার নেয়। একাধিকবার টাকা ফেরত দিতে চেয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করে সে।
এরপর ২০১৯ সালের ৩ জুলাই সকালে সৌরভী মন্ডল টাকা ফেরত নিতে প্রণবের বাড়িতে যান। টাকা না দিলে মামলা করার হুমকি দেয় সৌরভী। ঐ দিন রাতে প্রণব স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে ছিল। বাড়ি ফিরে যাবার পথে প্রণব সৌরভী মন্ডলের সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়। ঐ সময়ে সৌরভীকে সে জানায় তার অনেক সমস্যা চলছে টাকাটা সে দিতে পারবেনা। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়।
একপর্যায়ে প্রণব তার গলা চেপে ধললে সৌরভীর মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিক সৌরভীকে নড়াচড়া করতে না দেখে তার গলায় গামছা পেচিয়ে বারান্দায় ফেলে পালিয়ে যায় প্রণব।
তিনি আরও বলেন, তাকে যেন কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য সকালে গ্রামের মানুষের সাথে সৌরভীর লাশ দেখতে তাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন প্রণব। হত্যাকান্ডের ৩ দিন পর পালিয়ে প্রণব ভারতে চলে যায়। দীর্ঘ আড়াই বছর পর দেশে ফেরে সে।
সর্বশেষ তার মোবাইল ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত দু’দিন আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বর্ণনা দিয়েছে সে।
প্রণব মঙ্গলবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় আদালতে হত্যাকান্ডের বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে বলেও জানান তিনি।
যেভাবে প্রণবকে সন্দেহ করা হয়!
সৌরভী হত্যাকান্ডের মামলাটি ছিল একটি ক্লুলেস ঘটনা। নিহতের স্বামী ৭ জন
আসামির নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামিরা সকলে নিহতের
প্রতিবেশী। তাদের সাথে পূর্ব শত্রুতা ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
বর্তমানে তারা সকলে জামিনে রয়েছেন। প্রথমদিকে মামলাটি ডুমুরিয়া থানার
পুলিশ তদন্ত করে। কিন্তু পুলিশের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় বাদীর আবেদনে
আদালত ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর পিবিআই ঘটনাস্থল ও আশপাশের মানুষের কাছ থেকে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ
করে। এক পর্যায়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন প্রণব নামের একজন
নিহতের কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও হত্যাকান্ডের ৩ দিন পর থেকে গা ঢাকা
দিয়েছে। তখনই পিবিআই নিশ্চিত হয় এ হত্যাকান্ডের সাথে প্রণব জড়িত থাকতে পারেন। দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রণব ডুমুরিয়ায় ফিরে আসে। গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। পরে বিভিন্ন সোর্স মারফত ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রণবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পিবিআই
এর মুখপাত্র সৈয়দ মোশফিকুর রহমান।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য// জুন ০১,২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post