Print Date & Time : 25 August 2025 Monday 2:12 am

১৭ এপ্রিল ফুলবাড়ীর আঁখিরা গণহত্যা দিসব

প্রভাষক রীতা গুপ্তা, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

১৭ এপ্রিল দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আঁখিরা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রণে বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার চিহ্নিত রাজাকার কেনান সরকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শতাধিক বাঙালি হিন্দু পরিবারের দেড় শতাধিক নারী-পুরম্নষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে পাকিস্তানী খানসেনাদের হাতে তুলে দেয়। পরে খানসেনারা আটক সবাইকে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট সংলগ্ন আঁখিরা নামক স্থানের পুকুর পাড়ে নিয়ে লাইনে দাঁড় করে মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ানে গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে সকলেই শহীদ হন ওই আঁখিরা গণহত্যায়। আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের স্মরণ করতে কেউই কোন উদ্যোগ নেন না। ফলে দিনটি নিরবে আসে, আর নিরবেই চলে যায়।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী খানসেনা ও তাদের এ দেশীয় রাজাকার, আলবদর ও আল-শামসদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মুক্তিকামী মানুষ যখন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল ঠিক এমনই এক সময় আজকের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জের আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর, পার্বতীপুরের শেরপুর, খোলাহাটি, বদরগঞ্জ ও ভবানীপুর এলাকার শতাধিক বাঙালি হিন্দু পরিবারের দেড় শতাধিক নারী-পুরম্নষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট এলাকায় নিয়ে আসে উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার। কিন্তু কেনান সরকার ওই পরিবারগুলোর লোকজনকে ভারতে পৌঁছে না দিয়ে অস্ত্রের মুখে তাদের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে তুলে দেয় ফুলবাড়ীতে অবস্থানরত খানসেনাদের হাতে। একইদিন সকাল ১১টার দিকে খানসেনারা আটক পরিবারের নারী-পুরম্নষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের আঁখিরা পুকুর পাড়ে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ সময় দু’একজন শিশু-কিশোর প্রাণে বেঁচে গেলেও পরে তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। দেশ স্বাধীনের পর আঁখিরা পুকুর পাড়ে হত্যাযজ্ঞের শিকার ওইসব বীর শহীদদের হাঁড়-গোড়, মাথার খুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দেখতে পান এলাকাবাসী। অবশ্য দেশ স্বাধীনের পর রাজাকার কেনান সরকারকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ওই গণহত্যার প্রতিশোধ নেন।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত আলী ও ডিপুটি কমা-ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এছার উদ্দিন বলেন, ৭১ এ আত্মদানকারী এই বীর শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পাকিস্তানী হানাদার খানসেনা ও তাদের এদেশীয় রাজাকার, আল-বদর ও আল সামসদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস জানাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি’র প্রচেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়ে) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেই বধ্যভূমিতে গত ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরম্ন করে গণপূর্ত বিভাগ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ টাকা। একই বছরের ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন বছরেও কাজটি শেষ না হওয়ায় অর্ধ সমাপ্ত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে নির্মাণাধিন স্মৃতিস্তম্ভটি। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে এই দিনে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারি শহীদদের নিয়ে স্মৃতি চারণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, সরকারিভাবে আঁখিরা গণহত্যা দিবস পালনের নির্দেশনা পাওয়া গেলে দিবসটি পালন করা হবে। তবে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ স্থানীয়রা চাইলে দিবসটি পালন করতে পারেন।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//