ইরফান উল্লাহ, ইবি : জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানবিরোধী ভূমিকা রাখায় ৬১ ‘ফ্যাসিস্ট’ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি।
তাদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হুমকি, ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৯ শিক্ষককে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে প্রশাসন। সোমবার (১৮ আগস্ট) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানের সময় যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন তাদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির প্রতিবেদনে ১৯ জন শিক্ষক ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৩১ জন শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে ১৯ শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে- ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম, অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাশিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু, সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল, অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জয়শ্রী সেন, আল-ফিকহ এন্ড ল’ বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক এবং ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান।
শোকজ নোটিশ অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ইবির ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি-ধমকি, ভীতি প্রদর্শন, মারমুখী আচরণ, গালাগালি, মিছিলে উষ্কানিমূলক শ্লোগান প্রদান এবং পুলিশী গ্রেফতার ও হয়রানির বিষয়ে কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এছাড়া ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৩১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ভূমিকা রাখা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে গত ১৩ আগস্ট উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তারা। প্রতিবেদনে মোট ৬১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

Discussion about this post