শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস। এই দিবস উপলক্ষ্যে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের দ্বীপ সড়ক, চৌরাস্তার মোড়, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দপ্তর সুসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ ডিসেম্বর মুক্তদিবস উপলক্ষ্যে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গুলো দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়েছে। শক্রবার উৎসব মুখোর পরিবেশে দিনটি পালন হবে। স্বাধীনতার পর হতে জেলাবাসী এইদনিটি পালন করে আসছে।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর জেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। এই দিন মুক্তিযোদ্ধা গণ চারিদিক হতে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাদের। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ সমরে টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার আগে বাঙ্গালি রাজাকারদের শহরে কলেয়ক স্থানে পাহাড়া বসায়। তারপর তারা লালমনিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশনে একটি বিশাল বহরের বিশেষ ট্রেন প্রস্তুত করে। সেখানে জেলার যত বিহারী, অবাঙ্গালি, পাকিস্তানী সেনা ও তাদের পরিবার কে তুলে নেয়। তারপর তারা ট্রেনযোগে তিস্তা সেতু ওপর দিয়ে রংপুর ও সৈয়দপুর ক্যান্টমেন্টে পালিয়ে যায়। ট্রেনটি তিস্তা সেতু পাড়ি দেয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তুমুল সম্মুখ যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানী সেনাদের নেতৃত্বদানকারী এক মেজর এজাজা সহ অসংখ্য পাকিস্তানী সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেয়ে ট্রেনটি তিস্তা সেতু পাড় করে তিস্তা সেতুর একটি স্পেন্ট বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। যাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সেনা ও তাদের পরিবারবর্গদের বহনকারী ট্রেনটিতে আক্রমণ করতে না পারে। কিছু সময় পর পাকিস্তানী সেনারা বিশাল সমরাস্ত্র নিয়ে পুনরায় সেতুপাড়ে আসেন। সম্মুখ সমরে রাতে মুক্তিযোদ্ধা গণ টিকতে না পেরে পিছুহটে যায়। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাময়িক সময়ের পিছুহটাকে প্রাথমিক বিজয় ধরে নিয়ে তিস্তা সেতুর নাম করণ করে পাকিস্তানী মেজরের নামে এজাজ সেতু। কিন্তু ভোরের আলো স্ফুটিত হওয়ার পর পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে টিকতে না পেরে পাকিস্তানী সেনারা পালিয়ে যায়। সেই দিন হতে লালমনিরহাট পাকিস্তানী শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাটের একমাত্র গৌরবোজ্জল ইতিহাস লালমনিরহাটের মাটিতে মুক্তাঞ্চলে ৬ নং সেক্টরের হেডকোয়াটার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস দেশের অন্য ১০টি সেক্টরের হেডকোয়াটার ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের মাটিতে। লালমনিরহাট ৬ নং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরটি একমাত্র দেশের ভূ- খন্ডে মুক্তাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানী সেনারা সর্বশক্তি দিয়ে লালমনিরহাটে আক্রমণ করেছিল। শত শতবার চেষ্টার করে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তাঞ্চলে একবারেরও জন্য প্রবেশ করতে পারেনি। ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে মুক্তাঞ্চলের প্রবেশমুখ বড়খাতায় নদীপথে, স্থলপথে ও রেলপথে নিচ্ছিদ্র দূর্গ গড়ে তুলে প্রতিরোধ করেছিল। এই বলয় ভাঙ্গতে আকাশপথে, স্থলপথে ও নৌপথে এবং রেলপথে পাকিস্তানীরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রতিরোধ দূর্গ ভাঙ্গতে পারেনি। এখনো বড়খাতায় আনাছেকানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বীর শহীদের কবর। সঠিকভাবে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই। এমন কি লালমনিরহাট জেলার এই বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়ন স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও হয়নি। নতুন প্রজন্মের কাছে মহানমুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস এখনো অজানা রয়ে গেছে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post