মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
৭ মে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অপহরণ ও গণহত্যার ৫৩ বছর।চিহিৃত হয়নি ঘনকবর, নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি ফলক।
এ দিন হত্যা করা হয় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) এবং তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে।
১৯৭১ সালের এই দিনের পাকহানাদার বাহিনী অত্যাচার নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় মির্জাপুরের নিরীহ বাঙ্গালীর উপর। নিরীহ বাঙ্গালীর আত্নত্যাগের মধ্য দিয়ে মির্জাপুর হানাদার মুক্ত ও স্বাধীন হলেও সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতির কথা মনে করে আজও মির্জাপুরবাসী শিউরে উঠে। যাদের আত্নত্যাগের মাধ্যমে মির্জাপুর স্বাধীন ও মুক্ত হয়েছে স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তাদের স্মরণে নামসহ নির্মিত হয়নি স্মৃতি ফলক। এ নিয়ে শহীদ পরিবার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা।
আজ সোমবার (৬ মে) উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবকে কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলকসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের আহবানে সারা দিয়ে মির্জাপুর গঠিত হয় সংগ্রাম পরিষদ। সাবেক এমপি প্রয়াত ব্যারিস্টার শওকত আলী খান, সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ কামাল বীর বিক্রম ও প্রয়াত সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ একাব্বর হোসেন সংগ্রাম পরিষদের নের্তৃত্ব দেন। ৩রা এপ্রিল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়ান-সাটিচড়ায় প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজিত হবার পর মির্জাপুর সদরে এসে ঘাঁটি গেরে বসে। এদেশীয় দুসর আর রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় পাক সেনারা মির্জাপুর সদরের আন্ধরা সাাহাপাড়া, কুতুববাজার, পুষ্টকামুরী, বাইমহাটি, সরিষাদাইর ও পালপাড়ায় ঢুকে অত্যাচার নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসয়যোগ এবং গনহত্যা চালায়। ঐ সব এলাকার শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরকে হত্যা করে বংশাই ও লৌহজং নদীতে নিক্ষেপ করে বলে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষ দর্শিদের মধ্যে ভাষা সৈনিক একুশে পদকপ্রাপ্ত ও কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট্রের শিক্ষা পরিচারক প্রিন্সিপাল প্রতিভা মুৎসুদ্দি বলেন, সেদিন যাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল বিডি লি. এর প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ আসা, তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা। এছাড়া মির্জাপুর গ্রামের কমল সাহা, সুভাষ সাহা, মধু সাহা, সুধাম চন্দ্র সাহা, ঊমাচরন, ধীরেন নাথ সাহা, গদাচরন সাহা, কেরুশীল, রংলাল সাহা, নিতাই চন্দ্র, আন্ধরা গ্রামের গৌর গোপাল সাহা, গঙ্গাচরন, পদসাহা, কান্দু সাহা, সরিষাদাইর গ্রামের ভবেন্দ্র সাহা, রঞ্জিত সাহা, নিতাই সাহা, ভোলানাথ, গনেশ সাহা, দুর্গাপুর গ্রামের কানাই সাহা, রাখাল চন্দ্র সাহা, সুরেশ, ভবেশ মন্ডল, বাইমহাটি গ্রামের রঞ্জিত সাহা, নগীনা বাশফৈর, কান্ঠালিয়া গ্রামের জগদীশ বকসী, সাধু মালী, পুষ্টকামুরী গ্রামের ডাঃ রেবুতী মোহন, ফনিন্দ্র নাথ সাহা, মাজম আলী ও জয়নাল আবেদীন।
৭ মে উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা রায় বাহাদুর ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে রাজাকার আলবদর বাহিনী নারায়নগঞ্জের বাসা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তাদের কোন খোঁজ মিলেনি। কুমুদিনী পরিবার তাদের স্মৃতি এখনও ধরে রেখেছে।
৮ই মে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আবুল হোসেনের বৃদ্ধ পিতা জয়নাল সরকার এবং বাসায় আওয়ামীলীগের অফিস থাকায় মাজম আলীকে নরঘাতকরা পুড়িয়ে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ৭ই মে গনহত্যার নির্মমতার কথা ভুলতে পারেননি গোটা মির্জাপুর বাসী। সেদিন যারা ঘাতকদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরনে মির্জাপুরে সরকারীভাবে ৭ই মে কোন অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে না।
এছাড়া শহিদদের পরিবারগুলো পায়নি কোন সাহায্য, সহযোগিতা ও ক্ষতিপুরন। শুধু সেদিনের স্মৃতি মনে করে মির্জাপুর গ্রামবাসি রনদা নাট মন্দিরে কীর্তন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এছাড়া কুমুদিনী পরিবার কুমুদিনী কমপ্লেক্সে প্রার্থনা সভা, কাঙ্গালী ভোজ স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসুচী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিবসটি সরকারী ভাবে পালন, নিহতদের স্মরনে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মান এবং অসহায় পরিবারের দিকে বর্তমান সরকার একটু সু নজর দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা মির্জাপুর গ্রামবাসী এবং কুমুদিনী পরিবারের সদস্যদের।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল বলেন, ৭ মে গণহত্যা দিবসে মির্জাপুরে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের স্মরণে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্প স্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এছাড়া মির্জাপুর গ্রামের রণদা নাট মন্দিরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতে এই অনুষ্ঠান যাতে বড় আকারে করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//