আব্দুল বারী: বাঙালি সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি গালির নাম বেশ্যা। নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন, কাউকে শায়েস্তা করার মানসিকতায় এলেই তার উপর এই শব্দ বোমা নিক্ষেপ করে। যে এই বোমার শিকার হয় সেই বোঝে এই গালির কি যন্ত্রণা।
এই শব্দ কিভাবে জন্মেছে তা নিয়ে মতভেদের অন্ত নেই। তারপরও দেখা যাক কিভাবে এসেছে এই শব্দ।
পন্ডিতরা বলছেন, ‘বেশ্যা’ সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে। সংস্কৃততে এর মুল শব্দের নাম ‘বেশ’। সংস্কৃত এই শব্দটা ভাঙ্গলে হবে বেশ + য + আ।
মোনিয়র উইলিয়ামস তাঁর সংস্কৃত-বাংলা অভিধানে লেখেছেন, ‘বেশ’ শব্দটির মানে হলো বেশ্যার গৃহ বা বেশ্যালয়। বেশ্যা বলতে সেই সব স্ত্রী-লোকদের বুঝি,যারা অর্থের বিনিময়ে যৌন মিলনে লিপ্ত হয় বা নিজের দেহ সমর্পণ করে। সমার্থক শব্দে তাদেরকে আবার বলা হয় পতিতা, গণিকা, খানকি, নাগরী, বারবণিতা, বারাঙ্গনা, দেহোপজীবিনী, নগরপটিয়সী ইত্যাদি।
বেশ্যা বিত্তির প্রচলন হয় যেভাবেঃ উজ্জয়িনীর মহারাজা বিক্রমাদিত্যের নাম জড়িয়ে আছে। তিনি ছিলেন বিদ্যোৎসাহী এবং প্রজাবৎসল মহারাজা। তাঁর রাজসভাতেই কালিদাস প্রমুখ নবরত্নরা ছিলেন।
এই মহারাজা তৃষ্ণার্ত পথিকদের বিনামূল্যে জল দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই লক্ষে রাস্তার ধারে বসালেন পানশালা। এই জলসত্রগুলির নাম দিলেন ‘বেশ’। এই জলসত্রগুলির পরিচালনার জন্য মহিলা কর্মচারী নিয়োগ দিলেন।
রাস্তায় চলমান পথিক, বণিক, সৈনিক, পর্যটকরা সেখানে এসে জল খেতেন। কালক্রমে জলের সাথে যোগ হলো খাদ্য। খাদ্য পরিবেশনের জন্য বাড়লো নারী।
এরপর তারা সেখানে থাকা শুরু করলো। সেই সুবাদে পথিকরাও সেখানে রাত্রিযাপন করতে শুরু করলো। পয়শার বিনিময়ে শুরু হলো সেবা। সেই সেবা সময়ের ব্যবধানে যৌনতায় রূপ নিল।
এইভাবেই ‘বেশ’-এর মালকিন ‘বেশ্যা’য় পরিণত হন এবং ‘বেশ্যা’ শব্দটির উৎপত্তি হয়। তবে এর স্বপক্ষে শ্রুতি ব্যাতিত অন্য প্রমান অপ্রতুল।
অন্যমতে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় মৌর্য যুগের বহু আগে থেকেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গণিকা বা বেশ্যা রাখা হতো। পুরাণে উল্লেখ আছে যে, বেশ্যা দর্শনে ‘দিন ভালো যায়’। মহাভারতে উল্লেখ আছে, উৎসবের সময় বেশ্যারা রক্তবর্ণ বস্ত্র, মালা, স্বর্ণালঙ্কার পরে উৎসবে যোগদান ছাড়াও যুদ্ধের সময় সৈন্যবাহিনীর অনুচারী হতো।
তন্ত্রশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, চক্রপূজায় পাঁচ শ্রেণির বেশ্যা শক্তি বা দেবীর স্থান অধিকার করতে পারে। পাঁচটি শ্রেণি হলো: ১. নাগরী – নগরবাসিনী গণিকা ২, রাজবেশ্যা – রাজার দ্বারা অনুগৃহীত গণিকা ৩. গুপ্ত বেশ্যা – সদ্বংশীয়া গোপন অভিসারী নারী ৪. ব্রহ্ম বেশ্যা -তীর্থস্থানে যারা গণিকাবৃত্তি করে ৫. দেববেশ্যা – মন্দিরের দেবদাসি।
এতে প্রতিপন্ন হয়, মহারাজা বিক্রমাদিত্যের অনেক আগে থেকেই ভারতে বেশ্যাবৃত্তি চালু ছিল। ভারতে গণিকাবৃত্তি হিন্দু যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ অবধি চলে আসছে কোলকাতার সোনাগাছির পতিতালয় এর একটা বড় প্রমাণ।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post