এক ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের নাম আব্দুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না। বয়স মাত্র ২৩। পিতার মো: শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া। মা মৃত ঝর্ণা বেগম। বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারকোটা ভূঁইয়া বাড়ি। পেশায় কখনো গাড়ির হেলপার, কখনো বেকারীর কারিগর। এই সিরিয়াল কিলারের সহযোগী হিসেবে ছিল দীন ইসলাম দীনু (১৯)। দিনুর পিতার নাম মোস্তফা। বাড়ি কুমিল্লার কোতয়ালী থানার দুর্গাপুর।
মুন্না নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে দেহভোগ, পরে টাকা ও গহনা হাতিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করতো। গত এক মাসে সে দুইজন নারীকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছে। তালিকায় ছিল আরো অনেকেই। এটা ছিল তার পেশা ও নেশা।
যেভাবে খুন হয়েছিল পান্না আক্তার:

পান্না আক্তার এক সুন্দরী নারীর নাম। মোবাইল কলের মাধ্যমে সে কিলার মুন্নার সাথে পরিচিত হয়। এরপর তার প্রেমের ফাঁদে ধরা পড়ে। এরই এক পর্যায়ে সে একদিন মুন্নাকে বিশ্বাস করে ঘর বাঁধার আশায় বের হয়। এরপর মুন্না তার সাথে যা করার তা সেরে গত ২০ অক্টোবর ২০২১ তারিখ দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটের মধ্যে পান্নাকে হত্যা করে ঘরবাঁধার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। পান্নার লাশ বিছানার চাদরে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাস্তায় ফেলে দেয়।
পুলিশ লাশটি উদ্ধারের পর দেখতে পায় উভয় চোখে আঘাত করে নীচের ঠোঁট কেটে দিয়েছে। লাশের গলায় প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শক্তভাবে মোড়ানো। দুটি ওড়না দিয়ে হাতে এবং দুটি প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে পা বাঁধা। এ ব্যাপারে পান্নার মা মোছাঃ শরীফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর থানায় মামলা মামলা করেন। মামলা নং ৪০, তারিখ ২৫/১০/২০২১, ৩০২/২০১/৩৪।
লিলি বেগমকে (২৮) যেভাবে হত্যা করেছিল মুন্না:

লিলি বেগম একজন গৃহীনি। পিতার নাম মৃত আব্দুল খালেক, স্বামী মোঃ জনি, সাং- আমতলী (ধর্মপুর), থানা- কোতয়ালী, জেলা- কুমিল্লা। ভালোই চলছিল তার সংসার। পারভেজ সঞ্জীব নামের এক বন্ধুর মাধ্যমে মিলি বেগমের সাথে পরিচিত হয কিলার মুন্না। এরপর মুন্না তার প্রতি প্রেম নিবেদন করে। লিলি সেই নিবেদনে সাড়া দিয়ে মুন্নার প্রেমিকা হয়ে নিজের অজান্তেই খুনিকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। একমাস প্রেমালাপের পর মুন্নার সাথে ঘর বাাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে পান্না। মুন্না সেই স্বপ্নে রঙ লাগিয়ে গত ২ সেপ্টম্বর ২০২১ তারিখে তার যা আছে তাই নিয়ে জাগরঝিল এলাকায় আসতে বলে। লিলি নগদ ২০ হাজার টাকা ও ২ টি মোবাইল ফোন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে মুন্নার আশায় সেখানে চলে যায়।
মুন্না ও দ্বীন ইসলাম লিলি বেগমকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে যা করার দরকার তা করে হত্যা করে। এরপর লিলি বেগমের লাশ ফেনী মডেল থানার শর্শদী ইউপিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয়। ফেনী সদর মডেল থানা পুলিশ ১৩ সেপ্টম্বর ২০২১ তারিখে লিলি বেগমের গলিত লাশ উদ্ধার করে।
এব্যাপারে ফেনী সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। যার নং ৩০ তারিখ ১৩/০৯২০২১। ধারা ৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি।
যেভাবে ধরা পড়লো নারী হত্যায় উন্মত্ত মুন্না ও দিনু: গত ২ সেপ্টম্বর ২০২১ তারিখ খুন হয়ে যাওয়া লিলি বেগমের মা শাহনূর আদালতে একটি মামলা করেন। ২৬ অক্টোবর আদালত পিবিআই কুমিল্লার প্রধানকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। পিবিআই প্রযুক্তির সহায়তায় আব্দুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না এবং দীন ইসলাম দীনুকে কুমিল্লা কোতোয়ালী থানাধীন সুরগাপুর এলাকা থেকে ৩১/১০/২০২১ তারিখ সকাল ৬.৩০ মিনিটে গ্রেফতার করে।

পিবিআই এক প্রেসব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার) পিপিএম তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় পিবিআই কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল আহমেদ ও পুলিশ পরিদর্শক (এন) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ মামলা দুটি তদন্ত করেছেন।
তদন্তে জানা গেছে প্রায় ২ মাস আগে মুন্না লিলি বেগমের মোবাইলে একটি কল করে। এর মাধ্যমে তারা একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। এক পর্যায়ে মুন্না তাকে বিয়ের প্রলোভন দেয়। এতে প্রলোভিত হয়ে লিলি বেগম রাত সোয়া ৮টার দিকে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মুন্নার সাথে চলে যায়। মুন্না তাকে ভাড়া বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে।
এরপর তার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ হত্যা করে। লাশ চাদরে দিয়ে পেঁচিয়ে বস্তাবন্দী করে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার সদর দক্ষিন থানার গোপিনাথপুর এলাকার সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ এর বিপরীত পার্শ্বে ফেলে দেয়।
পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এটি একটি কুলস হত্যা মামলা। আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে আসামীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করেছি। তার কাছ থেকে মিলি বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদ্বয় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে।
একই ভাবে পিবিআই পান্না হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। এই দু’টি হত্যাই মুন্না ও তার সহযোগী করেছে। মোবাইলে নারীদের কনভিন্স করে প্রেম নিবেদন করে তারা সন্মোহিত করে। এরপর তাদের ঘর থেকে বের করে এনে নিজেদের অবস্থানে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এমন আরো বেশ কয়েকজন নারীকে তারা প্রলুদ্ধ করেছিল। ধরা পড়ে যাওয়ায় বেঁচে গেছেন ওইসব নারীরা।
উপসংহার: লজ্জার প্রয়োজন নেই। এই বিষয়গুলো প্রচার করে অন্য নারীদের সচেতন করুন। তারা যেন কারো মোবাইল প্রেমে পড়ে এমন হত্যার শিকার না হন।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/৩ নভেম্বর/২০২১