ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা এবং তজুমদ্দিন উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম সীট্রাকটি দীর্ঘ ৬মাস বন্ধ রয়েছে। কালবৈশাখী মৌসুমে ছোট ট্রলারে মেঘনার ডেঁঞ্জার জোনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। দীর্ঘদিন সীট্রক বন্ধ থাকার কারনে এপার- ওপারের যাত্রীদের চরম ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে। সীট্রাক না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে ইঞ্জিন চালিত ছোট ট্রলারে করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। মানুষের নিত্যদিনের এহেন দূর্ভোগের চিত্র লাগবে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহন না করায় সাধারন মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ৬মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যাবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়নি। কালবৈশাখী ঝড়ে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এছাড়াও মনপুরা থেকে ৬-৭টি অবৈধ নৌরুটে পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট ট্রলারে যাত্রীরা পাড়ি দিচ্ছেন। ফলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে এইসব অবৈধ নৌরুটে। জেলার ও পাশ্ববর্তী উপজেলার সাথে মনপুরা উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই হচ্ছে নৌ পথ। এনব রুটে বর্ষা মৌসুমে সি-ট্রাক ও শুষ্ক মৌসুমে লঞ্চ চলাচল হয়ে আসছিলো। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে টেন্ডারে পাওয়ায় এস.কে ট্রেডার্স কর্তৃপক্ষ সি-ট্রাকটি ডগে কাজ করাচ্ছেন বলে জানান।
জানা যায় ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঞ্জার জোনে সি-সার্ভে বিহীন নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। বিআইডব্লিউটিসির “ শহীদ শেখ কামাল” নামে একটি সিট্রাক চলছিল এই ডেঞ্জার জোনে। যাত্রীরা জানান অনেক পুরানো এ সিট্রাকটি উত্তাল মেঘনা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে এই রুটের সি ট্রাকটি। এর পর ঘাট ইজারাদার অবৈধভাবে ছোট একটি লঞ্চ দিয়ে উত্তাল মেঘনায় যাত্রী পারাপার করছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, সিট্রাক চলাচল বন্ধের পর থেকে ডেঞ্জার জোনে অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনানদী পার হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন নৌ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে অন্যদিকে অতিরিক্ত সময় ব্যায় হচ্ছে। যাত্রীরা জানান, জীবনের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ট্রলারে যাতায়াত করছে। যাত্রীরা ক্ষোভের সাথে বলেন, জরুরী কাজ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ট্রলারে করে আসা-যাওয়ার সাহস করেছি। এদিকে ব্যাস্ত এই নৌরুটে প্রতিদিনই ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল আসে তজুমদ্দিনসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে। অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে মালামাল আনতে পারছেননা। আবার যারা ঝুঁকি নিয়ে মালামাল ছোট ট্রলারে করে আনার সাহস করছেন তাদের বেশীরভাগ মালামালই ঢেউয়ের ছিটকে পড়ে ভিজে যাচ্ছে। ফলে তাদের লাভের চেয়ে লোকসানের মাত্রাই বেশী হচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের মাঝেও ক্ষোভের কমতি নেই। তবে যাত্রীরা এ ধরনের র্দূভোগ থেকে চিরস্থায়ী পরিত্রান চায়। সরেজমিনে হাজিরহাট ল্যান্ডিং ষ্টেশন ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলা পরিষদ থেকে নেওয়া ঘাট ইজারাদার শাহজান মাঝির ছোট ট্রলারটি অবৈধভাবে যাত্রী পারাপার করছেন। এ বিষয়ে ইজারাদার প্রতিনিধি মোঃ মিলন জানান, সিট্রাক বন্ধ থাকায় ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন। এই ট্রলারটি না থাকলে যাত্রীদের যাওয়া-আসা সম্পুর্ন বন্ধ হয়ে যেত। এ ব্যাপারে সিট্রাক পাওয়া ইজারাদার এস.কে ট্রেডার্স প্রতিনিধি ভুট্টো জানান, এই রুটের জন্য যে সীট্রাকটি বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত পুরনো। বেশীরভাগ সময়ই ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। এজন্য কর্তৃপক্ষ নারায়নগঞ্জ ডকউয়ার্ডে নিয়ে মেরামত করছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিট্রাক চললেও অবৈধভাবে ছোট ট্রলার দিয়ে যাত্রী পারাপার করছেন অবৈধ কিছু ট্রলার মালক। আমরা প্রশাসনকে এ বিষয়ে বার বার অবহিত করলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। যার ফলে আমরা খুব লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়। শীঘ্রই সীট্রাকটি এই রুটে নিয়মিত হবে বলে তিনি জানান। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী পরিচালক (ভোলা নদী বন্দর) সহিদুল ইসলাম জানান ডেঞ্জার জোনে অবৈধভাবে সি-সার্ভে বিহীন নৌযান চলাচল করতে পারবেনা। এই ধরনের নৌযান চলাচলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা বলেন, পুরানো সিট্রাকটি বারবার বিকল হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তাই একটি নতুন সিট্রাক দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। সিট্রাকের অভাবে তিনি ও তার দপ্তরের কর্মকর্তসহ যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারাপারের বিষয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে তিনি জানান।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//০৮ এপ্রিল,২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post