বেশি কাজের তো দরকার নেই। নিজের দায়িত্ববোধ জাগ্রত রাখলেই মেলে অনেক কিছু। আইন মন্ত্রী আনিসুল হক তার নির্াচনী এলাকায় সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন। আর এতেই তিনি প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন।
জানা গেছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে সাহেবী ভাব না দেখিয়ে মই বেয়ে উপরে ওঠে কাজের মান পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রচন্ড রোদ ও গরমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে এই আশ্রয়ণ পকল্পের কাজ দেখে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ওই ছবি এবং খবর ব্যপক প্রচারণা পেয়েছে। সেই প্রচারণার জোর এতটাই যে, ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, আখাউড়ার ইউএনও রুমানা আক্তার ও এসি ল্যান্ড সাইফুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। স্থানীয় জেলা প্রশাসক অভিযোগ তদন্তে গিয়ে সত্যতা পেয়েছেন। সেখানে নিয়মানুযায়ী রড, সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। একজন ঠিকাদারকে ১৬৯টি ঘর নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছে।
এই অপরাধে ইউএনও রুমানা আক্তারকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলামকে বান্দরবানের থানচি উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি নিয়েছিলেন তার মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত ও ভাল উদ্যোগ ছিলো ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে সারাদেশে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি খাস জমিতে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির আভিযোগ ওঠে। নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ঘর বানানোর ফলে অনেক স্থানে তা ভেঙ্গে পড়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে অনেক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।
এমতাবস্থায় আইনমন্ত্রী তার নিজের সংসদীয় এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের খবর পেয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। সারাদেশেই মন্ত্রী এমপিদের এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু যেসব অনিয়ম দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয় তাতে মন্ত্রী এমপিরা খুব একটা গায়ে মাখেন নি। তারা সবকিছু স্থানীয় প্রশাসনের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তারা দায়িত্ব নেননি। অথচ মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ করেই শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের যেসব ভাল কর্মসূচি রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে ভাল ও শ্রেষ্ঠ কর্মসূচি হলো ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে আশ্রয় দেয়ার প্রকল্প।
গরীব রাষ্ট্রের এই উদ্যোগটি বিশ্বের অনেক গরীব দেশের কাছে মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছে। কিন্তু মুজিব বর্ষে শেখ হাসিনার এই কর্মসূচী কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব রাজনৈতিকভাবে তুলে ধরে পারছেন না। তারা এটাকে আমলাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে স্থানীয়ভাবে তারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। কোনো মন্ত্রী বা এমপি যদি শুরু থেকেই নিজ নিজ এলাকায় এই প্রকল্পটির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতেন, নজরদারি রাখতেন তাহলে মাঠ পর্যায়ের ছোট আমলারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হতে পারতেন না।
আনিসুল একজন সংসদ সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এরপরও তিনি এলাকার এই প্রকল্পটিতে নজর রেখেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আবেগের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম সহ্য করেন নি। অনিয়ম করা ক্ষুদে আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যার ফলে তার এলাকায় এই কর্মসূচিতে অনিয়ম করার বাসনা ছিকেয় তুলতে তারা বাধ্য হয়েছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে আইনমন্ত্রীর সততার কারণে। রাজনৈতিক আঙ্গীকারের কারণে।
রাষ্ট্রের গরীব মানুষ যাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই, এতটুকু আশ্রয় নেই।,তাদের জন্য নির্মিত একটি ঘর বানাতেও যদি দুর্নীতি হয় তা হলে দেশপ্রেম বলতে কিছু থাকে না। কিন্তু অনেক মন্ত্রী এমপি এই প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে চুপ রয়েছেন।
এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করলেন আইনমন্ত্রী। ভালো কাজের প্রশংসা করতেই হয়। তাঁর ছবি দিয়ে নেটিজেনরা বলছেন, “স্যালুট আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।” এ জামানায় একজন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতার জনগণের কাছ থেকে স্যালুট পাওয়া অনেক বড় পাওয়া। এটা স্বীকার করতেই হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ২৮, ২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post