জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: আগামী ১৫ জুন চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৯টি ভোটকেন্দ্র একাধিকবার পরিদর্শন করে ভোটের উপযোগী ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিনে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র ঘুরে পেয়েছেন এর ভিন্ন চিত্র।
এতে ইউনিয়নের ০৯টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখতে পান চরপাথরঘাটা ৩ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চরপাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশটি ভোটের অনুপযোগী। অনেক জায়গায় ১০০ গজের ভেতরে দুই কেন্দ্র পাশাপাশি। অনেক মেম্বার প্রার্থী আবার পূর্বের ভোটকেন্দ্রে ভোট করার আবেদন জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর। যা তদন্তও করে গেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত ঝুঁলিয়ে রয়েছে।
দেখা যায়, পশ্চিম চরপাথরঘাটা স্কুলটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে টিনের কয়েকটি রুম ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। স্কুল প্রাঙ্গন জুড়ে নির্মাণসামগ্রীর স্তুপ। বালি আর ঘাসের ঝোপঝাড়। সামনের রাস্তায় কর্দমাক্ত পঁচা পানি। ফলে, এতসব ঝক্কি ঝামেলা মোকাবিলা করে এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত হবে কিনা আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, স্কুলটি ভোটকেন্দ্র হিসেবে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেকটা নিরাপত্তাহীন বলা যায়। সেখান থেকে কেন্দ্রটি সরানোর দাবি উঠেছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস বলছে, তাঁরা গত ৬/৭ মাস আগে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের সব ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটের উপযোগী বলে চিহ্নিত করেছেন। যদিও তাঁরা জানিয়েছেন, এলাকাবাসীর পক্ষে যদি কোন লিখিত আবেদন করা হয়। সেক্ষেত্রে ওই কেন্দ্রটি পূনরায় পরিদর্শন করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত দেবেন জেলা অফিস।
চরপাথরঘাটা ৩নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা ও একাধিক ভোটারদের সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, পশ্চিম চরপাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ ভোটের অনুপযোগী। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রটি সরিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে নিয়ে গেলে সবার জন্য সুবিধা হতো। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নির্বাচনী উপযোগী পরিবেশ এবং ইভিএম মেশিন বসানো সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
তথ্য পাওয়া যায়, গত ১১ মে কর্ণফুলী নির্বাচন অফিস সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা অফিসে যে চিঠি প্রেরণ করেছেন তাতে উল্লেখ রয়েছে, কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সর্বমোট ০৯টি সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র প্রস্তুত করেছেন। তারমধ্যে ০৭টি ভোটকেন্দ্রে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যবহৃত হয়েছিলো।
কিন্তু নানা কারণে চরপাথরঘাটা ৪নং ওয়ার্ডের পূর্বের ভোটকেন্দ্র খোয়াজনগর রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটির অবস্থান ছিল ৫নং ওয়ার্ডে। বর্তমানে ৪নং ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী প্রতিষ্ঠান থাকায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রটি পরিবর্তন করে আজিমহাকিম স্কুল এন্ড কলেজে কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।পাশাপাশি চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে পূর্বের ভোট কেন্দ্র ইছানগর পরিবার পরিকল্পনা অফিস ভোট কেন্দ্রটির অবস্থান ছিল ৮নং ওয়ার্ডে। বর্তমানে ৯নং ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী প্রতিষ্ঠান থাকায় হযরত
শাহ জালাল (রঃ) কিন্ডার গার্টেন স্কুলে (২য় তলা) নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারে পরিবর্তিত এসব নতুন কেন্দ্রেই ভোট হবে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল শুক্কুর জানান, আমরা দশ বারের উপরে সব কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে ভোটের উপযোগী বলে দেখেছি এবং সে অনুযায়ি উধ্বর্তন স্যারদের জানিয়েছি। তবুও জনগণ যদি মনে করেন পশ্চিম চরপাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভোটের অনুপযোগী তাহলে ভোটারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠাব। সেখান থেকে এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরো বলেন, পশ্চিম চরপাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার ওপারে একটি মাদরাসা থাকলেও সেখানে কেন্দ্র করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ওটা ২ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মতে, একটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র অন্য ওয়ার্ডে কিছুতেই প্রবেশ করা যাবে না। যদিও অতীতে কোন না কোন কারণে বা জাতীয় নির্বাচনে ব্যতিক্রম ঘটলেও এখন তা সম্ভব হবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে সাধারণ ওয়ার্ড ও ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ০৯টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড ০৩টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৪টি। অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা না থাকলেও ভোট কক্ষ কিন্তু ১১টি।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post