পশ্চিমাঞ্চল রেলে হচ্ছেটা কি? এ বিষয়টি বলতে হলে একটি প্রসঙ্গ চলে আসে। যেমন এক সময় বলা হতো “খাম্বা আছে তার নেই। তার আছে বিদ্যুৎ নেই।” বিষয়টি পুরাপুরি এমন না হলেও অনেকটা এই ব্যবস্থার মতই।
বলছি পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের কথা। এখানে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। রেল ভবন ও স্টেশন বেড়েছে। কিন্ত যেই রেল লাইনের উপর দিয়ে গাড়ি চলে তার কোন উন্নয়ন হয়নি। যা আছে নেই সেটা রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোন উদ্যোগ। যার ফলে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ওখানকার রেলপথ।
ওই অঞ্চলের একজন প্রবিন সাংবাদিক জানিয়েছেন, প্রতিদিন পার্বতীপুর হয়ে ঢাকা খুলনা রাজশাহী ও সান্তাহার পর্যন্ত দিন ও রাতে অসংখ্য দ্রুতগতির আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। চলাচল করে পণ্যবাহী ও জ্বালানীবাহী ট্রেনও। এই রুটে রেললাইন ঠিক আছে কিনা বা সংস্কারের প্রয়োজন কিনা সেটি দেখার জন্য রয়েছে রেলের ওয়েম্যান ও কিম্যান। তাদের সুপারভিশন করেন সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তা। কাগজে কলমে দেখানো হয় লাইন চেক ওকে। কোথাও কোন সমস্যা নেই। বাস্তবচিত্র মোটেও সমস্যাহীন নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে আধুনিকায়ন করছেন। যার ফলে আগের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে অনেকগুণ। অনলাইনে টিকেট বিক্রি বেড়েছে। যাত্রীর চাপ বাড়ছে ট্রেনে। অথচ যে লাইনটির উপর দিয়ে ট্রেন চলছে সেদিকে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি তেমন দেখা যায়না।
রেল লাইন মেরামতিতে তদারকী না থাকার কারণে গত ১৯ আগষ্ট রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন একটি বড় দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন শুক্রবার (২০ আগষ্ট) ভোরে পাঁচবিবি-হিলি স্টেশনের মাঝামাঝি কোকতারা নামক স্থানের এলাকাবাসি রেললাইনে প্রায় ৮ ইঞ্চি অংশ ভাঙা দেখতে পান। এপর কয়েকজন একটি লাল গামছা ধরে রেললাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। লাল কাপড় দেখে চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এরপর ভাঙা অংশ মেরামত করে প্রায় এক ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এভাবে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় রক্ষা পায় ট্রেন ও ৮০০ যাত্রী।
স্থানীয় সূত্র আরো বলেছে, রেলের অধিকাংশ কর্মকর্তা রেল লাইন মেরামত ও তদারকীর চেয়ে বিভিন্ন রেলভবন নির্মান ও সংষ্কার কাজকে বেশি পছন্দ করেন। যার আরো একটি নমুনা হলো এই যে, তাদের লোভের খোরাকের বলি হয়ে নীলফামারী-চিলাহাটি রেলষ্টেশনের উন্নয়ন কাজ থমকে গেছে। এই কাজের বরাদ্দ ছিল ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সেই বরাদ্দকে রাবারের মতো টেনে করা হয়েছে ১২০ কোটি। এরপরও চিলাহাটির নতুন রেলভবনের প্লাটফরমের নির্মাণ কাজ হচ্ছেনা। শোনা যাচ্ছে আরও কিছু বরাদ্দ বাড়িয়ে বর্তমান নক্সাটিকে ছোট করে মার মার কাট কাট করার অভিসন্ধি চলছে। এখনও চিলাহাটিতে স্থাপন করা হয়নি ২ কিলোমিটার লুপ লাইন। প্রকল্প কর্মকর্তা থাকেন পাকশীতে। মাঝে মধ্যে স্পেশাল ট্রেনে শ্বশুরবাড়িতে আসার মতো করে এসে টিএ ডিএ বাড়িয়ে আবার পাকশীতে ফিরে যান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাস্কের লোকজন মাস্ক পরে অপেক্ষায় থাকেন দিন যতই যাবে বরাদ্দ ততই বৃদ্ধি পাবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন নেই। পহেলা আগষ্ট থেকে চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি হয়ে পণ্যবাহি ট্রেন চলাচল নিয়মিত হয়েছে। ২১ আগষ্ট থেকে শিলিগুড়ি (নিউজল পাইগুড়ি) থেকে দার্জিলিংয়ের পথে চলছে ট্রয় ট্রেন। বাংলাদেশস্থ ভারতীয় ভিসা পয়েন্টে ভিসা প্রদান শুরু করেছে। হয়তো কয়দিন পরই চালু হবে ঢাকা-কলকাতার মৈত্রী ঠ্রেন। খুলনা-কলকাতার বন্ধন ও ঢাকা-চিলাহাটি হয়ে শিলিগুড়ি মিতালী এক্সপ্রেস। অন্য গুলো স্বাভাবিক হলেও ঢাকা-চিলাহাটি ও শিলিগুড়ির মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু রেলের কিছু কর্মকর্তার কাছে এ যেন নস্যি। তা না হলে কি ভাবে তারা দীর্ঘ তিন মাস চিলাহাটি রেলষ্টেশনের নির্মান কাজ বন্ধ রেখে ঘাপটি মেরে বসে আছেন এ প্রশ্ন সঙ্গত নয়কি।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post