“ভালুকের হাতে খুন্তা দিও না” প্রবাদটি প্রায় সবাই জানেন। ছোট বেলায় মুরুব্বিদের মুখে শুনেছিলাম। বড় হয়ে এর অর্থ বুঝতেছি। বুঝে আর কাজ কি! যা হবার তা তো হয়েই চলেছে। আমার লেখায় যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে তা তো নয়। সাংবাদিকতার জন্য শেখা মুলমন্ত্রের তাড়নায় না লিখেও তো পারি না।
তারপরও বলি, আগের যুগে সম্ভ্রান্ত লোকেরা রাজনীতি করতেন। ৪৭ এর পর ১৯ মহাকুমার মুসলিম লীগের অধিকাংশ কমিটিতে আইনজীবি ও শিক্ষকরা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। প্রত্যেক জেলার উচ্চ বংশীয় পরিবারের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষেরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাধারণ মানুষের উন্নয়নে, নিরাপত্তায় এবং অধিকার নিশ্চিত করতে ঐসব নেতারা আন্তরিক ও উদার ছিলেন।
তখন প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ বাবুরা নেতাদের সামনে টুপি খুলে সম্মান করতেন, সমিহ করে চলতেন। হালজামানায় সব কিছু উল্টে গেছে। হঠাৎ টাকাওয়ালারা টিকিট কিনে পাপুলের মতো বউসহ সংসদে ঢুকে, দলের বড় পদ কিনে রাজনীতির বারোটা বাজিয়েছে। তবে বংশীয় যে দুএকজন রাজনীতিবিদ আছেন, তাদের মধ্যে তরুণ এমপি নিক্সনের সঙ্গে বছর দুয়েক আগে ফরিদপুর ডিসির কথোপকথন মনে ধরেছিল।
ডিসিরা এক কাপ চাও নিজের পয়সায় খায় না। কাজের লোক, ড্রাইভার সবই পায় সরকার থেকে। তাহলে তাদের ঘুষ খাওয়ার দরকার কি? বেতনও পান মোটা অংকের। শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে কথা বলার সময় তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক এমপি, চেয়ারম্যান এমনকি দলের ছোট খাটো নেতার বাসাতেও গরিব-দু:খী মানুষ ভিড় করে। কারও রোগ চিকিৎসা, কারও মেয়ের বিয়ে, কারও বাড়িতে চাল নেই হাজারটা সমস্যা দেখতে হয় এসব রাজনীতিবিদদের। তারা কোন জায়গা থেকে ১০০ টাকা নিলে তার ৯০ টাকা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন, আর ডিসিরা জীবনে কখনও কাউকে ১০টা টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন তার প্রমাণ নেই। নিক্সনের এ কথাগুলো আজও কানে বাজে।
আমলারা আজীবন সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, জনগণের প্রতি কোন দায় নেই। প্রজাতন্ত্রের চাকর হিসেবে শপথ নিয়ে নিজেরা রাজা বনে যান, অনিয়মের শাস্তির বদলে তারা দুএক বছর পর পর বদলী হয়ে অন্য ‘রাজ্যে’ হাওয়া বদল করতে যান।
সম্প্রীতি মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার প্রকল্পের চিত্র দেখে সবাই হতাশ, লজ্জিত। ঘোড়াঘাট ইউএনওর উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছি, কিন্তু তার আলমারী থেকে নগদ অর্ধকোটি টাকা উদ্ধারের বিষয়ে কেউ কথা না বলায় মনে হয়েছে, কে কি লিখল তাতে কিছু যায় আসে না, তোমাদের কাজ তোমরা করে যাও। প্রধানমন্ত্রীর এসব ঘরে সিঁদ কেটেছে সরকারি পুঁচকে আমলারা। রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে এ অনিয়ম হলে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হতো, দুদিন না যেতেই ঘরগুলো কাঁদা-পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে- দেখার কেউ নেই।
তোফায়েল আহমেদের ক্ষোভ সংসদ থেকে ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পাওয়া আমলাদের, সম্মানিত জনপ্রতিনিদের উপরে দেখতে চাই না কেউ। এমপিরা কখনও স্যার হন না, কারও ভাই, কারও নেতা। তাদের নিকট খালি গায়ে, লুঙ্গি পরে সাধারণ মানুষ আবদার করতে পারে, সমস্যার কথা তুলে ধরে। কিন্তু কোর্ট-টাই পরা আমলাদের কাছে কে যাবে? কিসের সেবা দিবেন তারা? আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের দিকে তাকান, বাকিটা পরে ভাবলেও চলবে।
বাঁশের থেকে কঞ্চি মোটা হলে সমস্যা। মহান মুক্তিযুদ্ধে কতজন আমলা চেয়ার ছেড়ে যুদ্ধে এসেছিলেন? দেশের ক্রান্তিকালেও তারা ইউরোপ-আমেরিকায় বেগম পাড়া সজ্জিত করছেন। বড় বড় প্রকল্পের লুটপাটের কথা সবাই জানে, ভালুকের হাতে খুন্তি দিলে তা কারও জন্যই নিরাপদ হবে না।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post