কেডিট কার্ড নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের বিতর্ক। কেউ বলেন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করাই ভালো। আবার কেউ বলেন এই কার্ড নির্ভরযোগ্য বন্ধুর চেয়ে বেশি উপকারী। কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা না জেনেই অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করে থাকেন। দৈনিক দেশতথ্যের এই প্রতিবেদনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপকারীতা ও অনুপকারীতা নিয়ে আলোচনা করবো।
ক্রেডিট কার্ড খুবই উপকারী। এর সঠিক ব্যবহার জানলে এটা হতে পারে বিপদের বন্ধু। না জানলে হতে পারে সবচেয়ে ক্ষতিকর একটি বিষয়। যখন টাকার প্রয়োজন হয় তখন মানুষ অস্থির হয়ে উঠে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কার কাছে না হাত পাতে। কেউ দেয় কেউ দেয়না। যারা হাত পাততে চান না তারা বাধ্য হয়ে বিক্রি করেন শখের কোন সম্পদ বা জমি জায়গা। এই রকম দু:সময়ে একটি ক্রেডিট কার্ড হতে পারে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। কারো কাছে টাকা ধার নিতে হলে যেমন তার ব্যাপারে জানতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা নিতে হলে তার নিয়ম কানুন জানতে হবে। না জানলে এটা অনেকের জন্যই হতে পারে হিতে বিপরীত।
যারা ক্রেডিট কার্ড পাইয়ে দেয় তারা ব্যাংকের এজেন্ট। কার্ড গছিয়ে দিতে পারলেই বাড়ে তাদের ক্রেডিট। কালেন্টকে রাজী করানোর জন্য তারা করে কৌশলী আচরণ। কালেন্টকে নিরুৎসাহিত করবে এমন কোন কথা তারা বলেন না। তাদের কথায় মুগ্ধ হয়ে কার্ড নেওয়ার জন্য সবাই থাকে উদগ্রীব। যার ফলে না জেনেই তারা চুক্তি পত্রে সাক্ষর করে দেয়। ওতে কি লেখা আছে বা না আছে কেউই ঠিক মত তা পড়েন না। এখানেও ব্যাংক একটা কৌশলের আশ্রয় নেয়। যেমন ওই চুক্তিপত্র তৈরী করা হয় ইংরেজী ভাষায়। চুক্তির শর্তাবলী পড়তে গিয়ে যাতে কালেন্ট অধৈয্য হয়ে পড়ে তার জন্য এর আকার থাকে দরকারের চেয়ে অনেক বড়। এজন্য চুক্তির শর্ত না জেনেই বেশিরভাগ মানুষ চুক্তিবদ্ধ হয়। আর না জানা বিষয়ই ক্রেডিট কাডের বিষয়টিকে বিষিয়ে তোলে। ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ব্যাংক যা করে গ্রাহক তা জানলে এতটা ক্ষতি হতো না।
যে কারণে ক্রেডিট কাডের বিল বাড়েঃ
ক্রেডিট কাডের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা তুলবেন না। কোন বিপদে পড়ে যদি টাকা তুলতে বাধ্য হন তবে তা পরের দিনই শোধ করে দিবেন। না দিলে প্রতি হাজার টাকার জন্য প্রতিদিন ইন্টারেস্ট চার্জ হবে ৫৬ পয়শা। তারপর যে দিন বিল জেনারেট হবে সেদিন এই ইন্টারেস্ট গিয়ে মুল টাকার সাথে যুক্ত হবে। এভাবে মুল টাকার পরিমান বেড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়াবে।
নির্ধারিত দিনে বিল পরিশোধ না করলে জরিমানা হবে ৯০০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, বিল ও জরিমানা মিলে যা পাওনা হবে ব্যাংক তার উপর প্রতি হাজারে প্রতিদিন ৫৬ পয়শা করে চার্জ উঠাতে থাকবে। বিলম্ব বিলের জরিমানা ও মুল টাকার চার্জ গিয়ে পরবর্তী বিলে যোগ হবে। সেই বিলও যথা সময়ে পরিশোধ না করলে ১০০ টাকার ঋণ ৫০০ টাকায় পরিনত হতে সময় নিবে না। ব্যাংক ভেদে এই হারের তারতম্য আছে। (এই হিসাব টি সিটি ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা।) এর সাথে বাৎসরিক বিল, চেক বইয়ের পাতার দাম, চেক প্রসেসিং ফি, সার্ভিজ চার্জ, ম্যাসেজ এলার্টসহ আছে অনেক নামের হিডেন এন্ড আন হিডেন চার্জ।
ব্যাংককে টেক্কা দিয়ে কার্ড ব্যবহারের কৌশলঃ
ব্যাংক যত কৌশলই করুকনা কেন, যারা জানেন তারা ব্যাংককে টেক্কা দিয়ে বিনা সুদে ব্যবহার করেন ব্যাংকের টাকা। আর যারা জানেন না তারা হিডেন ও আন হিডেন চার্জ দিয়ে বাড়িয়ে ফেলেন ক্রেডিট কার্ডর বিল। নিচের নিয়ম মেনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে বিল বাড়বে না।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের যে সব সুবিধা আছে তা হলো এই যে, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনা কাটা করলে তাতে কোন এক্সট্রা চার্জ নেই। চেকের মাধ্যমে নগদ টাকা নিলে তাতে চেক প্রসেসিং ফি ব্যাতিত অন্য কোন চার্জ নেই। বিল জেনারেট হওয়ার পরের দিন ক্রেডিট লিমিটের সমুদয় টাকা চেক বা পজ মেশিনের মাধ্যমে খরচ করে ফেললেও কোন চার্জ উঠবে না। সেই হি
সেবে বিল জেনারেট হওয়ার পরের দিন যদি সমুদয় টাকাও তুলে নেন তাতে কোন চার্জ নেই।
মনে রাখবেন এই টাকা পরবর্তী বিল জেনারেট ডেটের আগের দিন অবশ্যই জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৩০ দিন ধরে ব্যাংকের টাকা বিনা সুদে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। যদি কোন কারনে বিল জেনারেট ডেটের আগে বিল পরিশোধ করতে না পারেন তাহলেও হাতে পাবেন আরো ১৪ দিন সময়। এই নিয়ে ব্যাংক ইন্টারেস্ট ছাড়াই ৩০+১৪ = ৪৪ দিন বাংকের টাকা ব্যবহারের সুযোগ হাতে থাকবে। এখানেই শেষ নয়, এই ৪৪ দিনের মধ্যেও যদি বিল শোধ করতে না পারেন তাহলে মিনিমাম বিল অপশনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
মিনিম্যাম বিল না দিলে আবারো জরিমানা হবে ৯০০ টাকা। এই জরিমানার টাকা মুল টাকার সাথে যোগ হবে। এভাবে সব পাওনা মুল বিলে যুক্ত হয়ে আগের নিয়মে প্রতিদিন হাজার প্রতি ৫৬ পয়শা হারে সুদ বাড়তে থাকবে। এই সুদ পরবর্তী বিলের সাথে যোগ হয়ে মুল টাকায় পরিনত হবে।
এসব নিয়ম মেনে বা জেনে যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তাহলে ক্রেডিট কার্ড নিশ্চয়ই আপনার বন্ধু না জানলে সেই সব চেয়ে বড় শত্রু। এরপরও কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য কলামে লিখুন।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/২৩ সেপ্টম্বর/২০২১
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post