সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তে ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা।
পুলিশ, বিজিবি ও মামলা সূত্রে জানা গেছে- গত শনিবার (২৫ মার্চ) রাত ৮টায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নরশিংপুর ইউনিয়নের চাটুরপাড় গ্রামে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন (২৮) ও ইয়াছিন (২৭) কে ৬০ বোতল ভারতীয় মদসহ গ্রেফতার করেছে।
অন্যদিকে এউপজেলার মৌলারপাড় সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ মহিষ পাচাঁর করার সময় বিজিবি সদস্যরা ২টি মহিষ আটক করে। পরে চোরাকারবারীরা দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ও
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার (২৬ মার্চ) রাতে বাংলাবাজার বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার মনোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
অপরদিকে গত শনিবার (১৮ মার্চ) ভোরে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পাটলাই নদীতে চোরাকারবারী ও সোর্সদের গডফাদার হাবিব সারোয়ার আজাদের (তোতলা আজাদ) নেতৃত্বে ১ শত মেঃটন চোরাই কয়লা বোঝাই করছিল সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়াগং। এ খবর পেয়ে কমান্ডার ইয়াহিয়া খান অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লার নৌকা আটক করার পর গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার বাহিনীর তোপের মুখে পড়ে। এরপর সকাল ৮টায় আটককৃত সেই অবৈধ কয়লা বোঝাই নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয় বৈধ কয়লা বলে। আর এই এঘটনাটি তাৎক্ষনিক ভাবে জানাজানি হলে পুরো সীমান্ত এলাকা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এরপর থেকে কোন প্রকার বাঁধা ছাড়াই ওপেন চোরাই কয়লা পাচাঁর হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, এর আগে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রি ও পাথর উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে, উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক সংবাদ এর তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল হোসেন রাফিকে গাছের সাথে বেঁধে
নির্যাতন করে গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা এখনও আদালতে চলমান রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার তাহিরপুর উপজেলার কামড়াবন্দ গ্রামের মৃত বদ মিয়ার ছেলে তোতলা আজাদ সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে ইতিমধ্যে হয়ে গেছে কোটিপতি। তার নিজ গ্রামে নির্মাণ করেছে বিলাস বহুলবাড়ি। আর সেই বাড়ির অন্দর মহলে বসে সোর্স নিয়োগ করে নিয়ন্ত্রণ করছে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থেকে শুরু করে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা পর্যন্ত বিস্তৃত তার নের্টওয়ার্ক। এজন্য ক্রয় করেছে অর্ধ শতাধিক মোটর সাইকেল। এসব গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করা হয় মাদকদ্রব্য।
এ ব্যাপারে কয়লা ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, আজাদ ভাই সবাইকে ম্যানেজ করে সোর্স দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা তাকে চাঁদা না দিয়ে কিছু করতে পারিনা। নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত সব জায়গায় তার লোক আছে। তাকে সবাই বাঘের মতো ভয় পায়।
চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট গ্রামের চোরাই কয়লা ব্যবসায়ী ও একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী খোকন মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে কয়লা চোরাচালান মামলা হওয়ার পর নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার সামনে অবস্থিত মনতলা ডিপুতে গিয়ে ব্যবসা শুরু করি। সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বর্তমানে আমি এলাকায় আছি এবং সবার সাথে চোরাই কয়লা সংগ্রহ করি। তবে আমি যা করি সোর্সদের মাধ্যমে আজাদ ভাইসহ সবাইকে চাঁদা দিয়েই করি। এই চোরাই কয়লার ব্যবসা আরো অনেকেই করছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়না।
চারাগাঁও ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত এনামুল, বাবুল মিয়া, রাজ্জাক মিয়া, মঙ্গল মিয়া ও ফরিদ মিয়ার বসতবাড়িসহ জঙ্গলবাড়ি, এলসি পয়েন্ট, লালঘাট এলাকায় রফ মিয়া, রিপন মিয়া, লেংড়া জামাল, বালিয়াঘাট সীমান্তের দুধের আউটা, লাকমা গ্রামে সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া, ইয়াবা কালাম মিয়া, রতন মহলদারগং শতশত মেঃটন চোরাই কয়লা, চিনি ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে বাড়িঘরের ভিতরে মজুত রেখে ওপেন ব্যবসা করছে।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর সীমান্তের টেকেরঘাট কোম্পানীর বিজিবি কমান্ডার ইয়াহিয়া খান বলেন, বিএসএফের গুলিতে ১ জনের মৃত্যু হওয়ার পর আমি টেকেরঘাট যোগদান করে চোরাচালান অনেক নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু আমি বনগাঁও সীমান্ত ক্যাম্পে বদলী হয়ে গেছি।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবির ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগের অভিযুক্ত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিজিবির ওপর চোরাকারবারীদের হামলার ঘটনাটি জানতে পেরেছি, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার সীমান্ত সিলেট জোনের অংশ, তবে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করার জন্য আমরা নিয়মিত কাজ করছি।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post