পানি সম্পদের সুরক্ষা ও সংরক্ষন এবং নদী কমিশন আইনের বিধিমতে, প্রাকৃতিক জলাধার, পুকুর খাল বিল দীঘি ঝর্না বা সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা চিহ্নিত বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে গন্য এমন যে কোন ধরণের জলাশয় ভরাট কিংবা বিঘ্ন সৃষ্টি অপরাধে জড়িত ও দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি-অর্থদন্ডের বিধান থাকলেও কোন কিছুই মানছেন না স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী ০৩নং জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া কোল (জলাধার) এপার-ওপার বরাবর মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মানের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে জলাশয় ইজারাপ্রাপ্ত স্থানীয় জেলেরা। বিবদমান পক্ষগনের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা, যে কোন মুহুর্তে রক্তে রঞ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে ওই কোলের মাটি ও পানি।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছেন অভিযোগের সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কুমারখালী উপজেলার ০৩নং জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকাজুড়ে প্রায় ১শ একর জমিতে পদ্মা নদীর শাখা কোল (জলাধার) প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে প্রতিবছর নির্ধারিত রাজস্ব আদায় সাপেক্ষে স্থানীয় জেলেদের মাঝে ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এই ইজারা প্রাপ্তি বা দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রভাবশালী পক্ষগণের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দে ছোট খাটো ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাঝে মধ্যেই সৃষ্টি হয় উত্তেজনা হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। এরই ধারাবাহিকাতায় নতুন করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ওই জলাশয়ের মধ্যে মাটি ভরাট করে বাধ নির্মানকে কেন্দ্র করে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনের দাবি স্থানীয় জেলে সস্প্রদায়ের।
এসময় স্থানীয় জেলে সমিতির সদস্যরা বলেন, প্রতিবছর নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করে সরকার ঘোষিত এই জলমহল জেলা প্রশাসনের নিকট থেকে ইজারা নিয়ে এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক জেলে প্রাকৃতিকভাবে মৎস্য চাষ করে থাকি। গত বছরেও এই জলমহলের উপর কালাম মেম্বারের নেতৃত্বে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে প্রাকৃতিক মৎস্য চাষে বাঁধা সৃষ্টি করে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর আমরা লিখিত অভিযোগ করলে ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে তা নিরসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারা বলেন এবছরের গত মাসে আমরা ইজারা প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে কালাম মেম্বারের নেতৃত্বে এক্সেভেটর (ভেকু) দিয়ে সরকারি জলাধারে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করছে। এতে জলাধারের পানি প্রবাহ ও প্রাকৃতিকভাবে মাছ চাষে বাঁধাগ্রস্থ হবে। অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদের প্রতিকার চেয়ে আমরা ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
অন্যদিকে অবৈধ ভাবে বাঁধ নির্মানে জড়িত প্রভাবশালী রাজনৈতিক স্থানীয় গোপগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার কালাম হোসেন জানান,পদ্মানদীর সাথে সংযুক্ত ও সরকার ঘোষিত প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে জগন্নাতপুর কোলের (জলাধার) দুইপারের মানুষের যোগাযোগ স্থাপনের যুক্তি তুলে ধরে মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মানের স্বপক্ষে বক্তব্য দেন।
কুমারখালীর উপজেলার ০৩নং জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লা আল বাকী বাদশা জানান, এই জলমহল স্থানীয় জেলে সমিতির সদস্যরা ইজারা পেয়েছেন তাদের মাছ চাষে কোন সমস্যা নেই। তিনি জানান জলমহলের ঔপারে একটি ওর্য়াডের জনগোষ্ঠির জন্য অচিরেই কালভাটের ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দেন তিনি।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানান, প্রাকৃতিক জলাধারের প্রকৃতি বা কোনরূপ ধরণ বা শ্রেনী পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে যারাই জড়িত থাক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং বিধিমতে ধার্য শাস্ত ও দন্ডের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জলাধারটা যে ভাবে থাকা উচিৎ সেটি উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১০ মে ২০২৩
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post