নওগাঁ জেলার ছয়টি সাংসদীয় আসনের সব কয়টি রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে।এবার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ জেলার ছয়টি সাংসদীয় আসনে লড়বে বড় দুই দলের একাধিক প্রার্থী। আগামী নির্বাচনেও সব আসন ধরে রাখতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে দলটি।
অন্যদিকে হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। জেলার ছয়টি আসনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি আসনে রয়েছে বড় দুই দলেরই একাধিক প্রার্থী।আর সব আসনগুলতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নই। সবকটিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) : এ আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি থাকলেও বিগত
২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থী হবেন।
এ ছাড়া এ আসনে নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এনামুল হকের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল হাসান রানার নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরী, গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ আহমেদ মোজাম্মেল চৌধুরী, পোরশা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক লায়ন মাসুদ রানা। জাতীয় পার্টি থেকে দলের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা সভাপতি আকবর আলী কালুর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) : জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী বরেন্দ্রভূমি
অধ্যুষিত পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার।তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়াও মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এইচ এম আখতারুল আলম, ঢাকা উত্তর কৃষক লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক বি এম আব্দুর রশিদ। বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জেলা আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) : মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছলিম উদ্দীন তরফদার এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগে শক্তিশালী দুজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
এদের একজন হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, অপরজন সাবেক সিনিয়র সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সখিনা সিদ্দিক, সাবেক সচিব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এনামুল কবীর, কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডি এম মাহবুব-উল-মান্নাফ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকারের ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক বি এস হুমায়ুন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) : জেলার সবচেয়ে বড় আসন এটি। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া যাদের নাম
মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ জেলা সভাপতি আবদুল বাকী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম ব্রহানী সুলতান মাহমুদ গামা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মোর্শেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মির্জা মাহাবুব বাচ্চু, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল মান্নান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল লতিফ শেখ। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মতিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী টিপু। জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন মণ্ডল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
নওগাঁ-৫ (সদর) : আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে মরহুম আবদুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। তিনি সব সময় মাঠে রয়েছেন ও কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান সেকার আহম্মেদ শিসান,জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট খোদাদাত খান পিটু ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু,জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হক সনি মেয়র নওগাঁ পৌরষভা নওগাঁ, জেলা যুগ্ন আহবায়ক ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইফতারুল ইসলাম বকুল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
নওগঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) : রক্তাক্ত জনপদ হিসাবে খ্যাত এ আসনটি। পরপর দুবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের মৃত্যু পর সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন রাণীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, জানা যায় তিনি ইউপি চেয়ারম্যান থেকে এখন সংসদ সদস্য তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুলতানা পারভীন বিউটি। ইসরাফিলের মৃত্যুর পর তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া মহিলা সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহিন মনোয়ারা হক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নওশের আলী, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. মোঃ ইউনুস আলী প্রামাণিক ,আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ইসলাম বিপ্লব এবং রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এ আসনে বিএনপি থেকে নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু শেখ। তিনি গত নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তার পাশাপাশি জেলা তাঁতী দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ এচাহক আলী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোঃ আলমগীর কবির আসলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। জাতীয় পার্টি থেকে রানীনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী দলীয় প্রার্থী হতে পারেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post