টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে উপজেলা পরিষদ ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নদী ও পাহাড় থেকে অবৈধ মাটি কাটা বন্ধের জোর দাবী জানিয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা পরিষদ ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিনের সভাপতিত্বে এবং এসিল্যান্ড সুচি রানী সাহার সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু।
বিস্তারিত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল, ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাহারুল ইসলাম, জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এ মতিনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন।
ক্ষোভ জানিয়েছে ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, অবৈধ মাটি কাটা বন্ধের জন্য তিনি ওসি, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের কাছে ইতিপুর্বে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্ত তারা তার কোন অভিযোগ রাখেননি।
সভায় চেয়ারম্যানগন তাদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন, একটি প্রভাবশালী মহল সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইর, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, গোড়াই, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নসহ বংশাই ও লৌহজং নদীতে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে আসছে।
এ ছাড়া এই চক্রটি বিভিন্ন স্পটে ভ্যেকু বসিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনরে ফলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হুমকির মুখে।
মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীর ফতেপুর ইউনিয়নে ভাঙ্গনে ফতেপুর বাজার সংলগ্ন পাকা রাস্তা বিলিন হয়ে মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে বাসাইল উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ. হাট ফতেপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, মির্জাপুর-বাসাইল রাস্তা, ফতেপুর-মহেড়া-মির্জাপুর রাস্তাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট ফতেপুর হাট ও বাজার হুমকির মুখে।
বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে বংশাই নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ^রসহ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। লৌহজং নদীর মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি, পুষ্টকামুরী, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন এবং ব্যেকু বসিয়ে মানি নেওয়ার ফলে নদী ভাঙ্গনে বহু পরিবার দিশেহারা হয়ে পরেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, হাট বাজারসহ ফসলি জমি।
এছাড়া বংশাই নদীর থলপাড়া ব্রিজ, ত্রিমোহন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন ব্রিজ, কোদালিয়া এলাকায় লতিফপুর ব্রিজ, হাটুভাঙ্গা ব্রিজ, লৌহজং নদীর উপর নির্মিত গুনটিয়া ব্রিজ, বরাটি এলাকায় বাবু দুঃখীরাম রাজবংশী ব্রিজ, পুষ্টকামুরী ব্রিজ, পাহাড়পুর ব্রিজ, বহুরিয়া এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নুরু ব্রিজ এবং ওয়ার্শি ব্রিজ হুমকির মুখে।
মাসিক সভায় চেয়ারম্যানদের বক্তব্য ও অভিযোগের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন, সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুচি রানী সাহা এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, যারা পাহাড়ের লাল মাটি এবং নদীতে অবৈধ ভাবে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করছে তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বালি উত্তোলন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৫,২০২৩//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post