খোন্দকার মুহাম্মদ খালেদ: দিনটি ছিল মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর, ২০২১)। গুলশানের “ মিরাজ “ চাইনিজ রেস্তোঁরা। সেখানে অনুষ্ঠিত হলো স্নেহভাজন ভাগ্নে মিলি-কালাম তনয় তানভির আজাদ সজলের জন্মদিন। আত্মীয়-বান্ধব পরিজন শুভ্যানুধ্যায়ী পরিবেষ্টিত জন্মদিনের সেই আয়োজনই ছিল অন্য রকম। রসনাতৃপ্তির ব্যবস্থায় ছিল বৈচিত্রময় খাদ্যসম্ভার। আর জমজমাট আড্ডায় অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই প্রাণবন্ত। প্রাণবন্ত ওই অনুষ্ঠানের আনন্দ আমার মনকে বিষাদে ব্যাথিত করেছে দু’টি কারনে।
এর একটি হলো প্রয়াত বড় ভাই খোন্দকার মুহাম্মদ ইব্রাহিম খালেদের স্মৃতি। অপরটি হলো রেস্তোরাটির অপমৃত্যুর সংবাদ। বিয়ের আনন্দ অনুষ্ঠানে বাজানো কণে বিদায়ের সুর যেমন আনন্দের উচ্ছ্বাস থামিয়ে দেয় ঠিক সেভাবেই ওই অনুষ্ঠানের সুর আমার মনকে বিষাদে ভরিয়ে দিয়েছে।
এই রেস্তোঁরার অন্যতম মালিক আমার ভাগ্নে সজল। এটাই হবে এই রেস্তোঁরায় আমাদের শেষ পারিবারিক অনুষ্ঠান। লক ডাউনের প্রভূত্বে দু’টি বছর ধরে রেস্তোরাটি ক্ষতবিক্ষত। এমন অবস্থায় পোষ্ট কোভিড সিন্ড্রোম থেকে “মিরাজ “ কে আর চালু রাখা যাবেনা। বড় বড় শিল্প কল-কারখানার প্রভাবশালী মালিকরা সরকারি প্রণোদনার সাথে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে খাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু “মিরাজ” এর মতো ছোট বা মাঝারি পুঁজির ব্যবসাগুলো কঠিন এক সময় মোকাবিলা করতে গিয়ে বিধ্বস্ত। যার ফলে মালিকের জন্মমাসেই এর অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। সজলের জন্মদিনের আনন্দঘন অনুষ্ঠানেও “মিরাজ” এর করোনা বিলাপ মনের আনন্দানুভুতিকে ভীষণভাবে হরষে-বিষাদময় করে তুলছে। একই সাথে “ মিরাজ” আমাকে নোষ্টালজিকও করে তুলছে। এই “মিরাজ”-এ আমাদের বহু পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
আমাদের বংশের বাতিঘর বিশাল ব্যক্তিত্ব প্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পরিবারের নতুন প্রজন্মের সকলের সমন্বয়ে “ নবীন সভা “ নামে একটি পারিবারিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের নতুন প্রজন্মের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর উন্মেষ ঘটানো। তার বিবাহ বার্ষিকীর ৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল এই মিরাজে। ওই দিনই মিরাজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘নবীন সভা’। সেই সভায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ নবীন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে হিরণ্ময়ী বক্তব্য রেখেছিলেন। জীবনাচরনের দার্শনিক দিক নির্দেশনা দিয়ে সেই বক্তব্যের ব্যাপ্তী ছিল ঘন্টা কাল।
সেদিনকার সেই অম্লান স্মৃতি ও “মিরাজ”-এর অপমৃত্যুর খবর এই অনুষ্ঠানকে আনন্দময়তার পরিবর্তে হরষে বিষাদে পরিণত করেছে। যা অনেক কাল ধরে আমাদের মনে থাকবে।
ঃ দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক বার্তা সম্পাদক খোন্দকার মুহাম্মদ খালেদ দৈনিক দেশতথ্যের স্মৃতিচারণ পাতার পাঠকদের জন্য তার পরিবারের স্মৃতিময় এই ঘটনাটি নিজের অনুভূতি হিসেবে এভাবেই তুলে ধরেছেন। ঃ
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/৬ অক্টোবর/২০২১
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post