ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
দরপতনে ঘাটাইলের পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে গত কয়েক বছরের মতো এবারও ধস নেমেছে। ফরিয়ারা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে কম দামে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করলেও পাইকার ও আড়তদারদের কাছে সেই দামেও বিক্রি করতে পারছেন না। এক প্রকার পানির দামে বিক্রি হচ্ছে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার চামড়া। ফলে লোকশান গুণতে গিয়ে পথে বসার অবস্থা হয়েছে তাদের। কোরবানির চামড়া অধিকাংশই অবিক্রিত রয়েছে। এতে শঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রচুর চামড়া এনে স্তূপ করে রেখেছেন হাটে। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় সেগুলো বিক্রি করতে পারছেন না।
হাতে গোনা দুই-একজন চামড়া ক্রেতা বাজারে এলেও; খুবই কম দাম বলছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাদের অভিযোগ, এক পিস গরুর চামড়া ক্রয় করে শ্রমিক দিয়ে লবণ মেশানোর পর গড়ে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা খরচ পড়ছে। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে এসে ৫০০ টাকাও দাম পাওয়া যাচ্ছে না। আর ছাগলের চামড়া বিক্রির অবস্থা আরও করুণ।
ব্যবসায়ীর বলেন, ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করলেও এত বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না। প্রতিপিস চামড়ায় লাভের পরিবর্তে ৯০ থেকে ২২০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এমন আকাশ-পাতাল তফাৎ হলে চামড়া বিক্রি করা সম্ভব নয়। তারা জানান, এ ব্যবসায় সারাবছর উপার্জন করা সম্ভব হয় না। বুকভরা আশা নিয়ে ঈদুল আযহা’র দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ হাটে চামড়া বিক্রি করে কিছুটা লাভ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার আশায়। এ বছর লাভ তো দূরের কথা চামড়া এবার তাদের পথে বসাবে। তাদের অনেকে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে বা সুদে টাকা নিয়ে চামড়া কিনেছেন। এখন চামড়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে- তাতে এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। সুদ ও ধার করা টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গলায় রশি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই তাদের।
এদিকে পাকুটিয়ার চামড়ার হাটটি কয়েকজন মিলে ইজারা নিয়ে থাকেন। হাটের ইজারাদার হুমায়ুন ও রফিক সংবাদদাতাকে জানান, চামড়ার বাজারে ধস নামায় তারাও বিপাকে পড়েছেন। চাহিদা মতো চামড়া আমদানি ও বেঁচা-কেনা না হওয়ায় তাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, চড়া মূল্য দিয়ে হাট ইজারা নিতে হয়েছে। পক্ষান্তরে দিন-দিন মানুষ চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে ভবিষ্যতে পাট শিল্পের মতোই চামড়া শিল্পও কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিয়া চোধুরী জানান, সারাদেশের মতো পাকুটিয়ার হাটেও চামড়ার দামে প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকার চামড়া শিল্পকে রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেহেতু ঈদের পর প্রথম হাট একদিন বসেছে, তাই পুরো বিষয়টি নিয়ে হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
দৈনিক দেশতথ্য// এইচ//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post