উৎপাদন বিপর্যয়ের শঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা
চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে মেহেরপুর জেলায়। শুরু থেকেই নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এ জেলার চাষীরা। যার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্খায় আছেন কৃষকরা।
পাট চাষে মৌসুমের শুরুতে দেশব্যাপী চলা দাবদাহ ও অনাবৃষ্টি ছিল। যার ফলে পাট গাছ আশানুরূপ বড় হয়নি। ছোট ছোট পাট গাছেই ধরেছে ফুল ও ফল। আবার সেই সঙ্গে মরেছে গাছও। এর মাঝে বেড়ে ওঠা পাট গাছে দেখা দিয়েছে তিড়িং পোকার আক্রমণ।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চাষিদের ঘরে উঠার কথা এ অর্থকরী ফসলটি। কিন্তু এই শেষ সময়টিতে এসে পাট গাছে তিড়িং পোকার আক্রমণের সাথে যোগ হয়েছে জমি থেকে ওঠে আসা লবণাক্ততা। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে পাট গাছ। আর বাকি গুলোতে তিড়িং পোকার আক্রমনে পাতা শুন্য হয়ে যাচ্ছে গাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, পোকার আক্রমণ ও আবাদি জমিতে লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পেতে কৃষি বিভাগের পরমর্শ নির্দেশনা মানার পরও মিলছে না কোন সমাধান। ফলে এবছর অনেকটাই নিশ্চিত ফলন বিপর্যয়ের কারনে পড়তে হবে লোকশানে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আবওয়াহা অনুকুলে না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরন করা সম্ভব হয়নি। তারপরও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে এমনটি ঘটছে। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
গাংনী পৌর এলাকার পাট চাষি সোহরাব জানান, এবছর পাট চাষ করে বিপদে পড়ে গেছি। শুরুর দিকে ছিলো প্রচন্ড রোদ সাথে ছিলোনা উপর বৃষ্টি। যার ফলে পাট উচ্চতায় এমনিতেই দেড় দুই ফিট কমে গেছে। সেচের জন্যও গুনতে হয়েছে বাড়তি খরচ। আর এখন শুরু হয়েছে তিড়িং পোকার আক্রমন ও পাটের জমিতে লবন ওঠে আসা। যে কারনে পাটের উৎপাদন তিন ভাগের এক ভাগই কমে যাবে।
একই এলাকার আরেক চাষি ইউসুব আলি বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এবার পাট চাষে খরচ বেশি হয়েছে। বিপরীতে পাটের অবস্থা তুলনামূলক খারাপ। তারপরও অধিক পরিচর্যার কারনে মাঠে থাকা পাট কোন মতে টিকে আছে। আর সপ্তাহ দুয়েক মধ্যে পাট কাটা শুরু হয়ে যাবে। এসময় মাটির নিচ থেকে লবণ বের হয়ে জমির অর্ধেক পাট মরে লাল হয়ে শুকাতে শুরু করেছে। সেচ দেয়া বলেন আর কিটনাশক প্রয়োগ করা। কত কিছুই না করলাম,তাতে কোন লাভ হয়নি। মধ্যে থেকে খরচ করাটাই লচ। এবার পাট চাষে করে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
রাইপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান মকলেছ জানান , এমনিতেই বৃষ্টির অভাবে এবার পাট বুনতে একটু দেরি হয়েছে। তারপরে বেড়েছে কম। আর শেষ সময় পাটক্ষেতগুলোতে হানা দিয়েছে তিড়িং পোকায়। পাটের ডগা কাণ্ড ও পাতা কেটে ফেলেছে পোকাগুলো। যার ফলে মাঠে এ পাট এখনো ২০ থেকে ২৫ দিন থাকলেও কোন লাভ হবে না। মণ প্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি করে ফলণ কমে যাবে। তারপর বতর্মান বাজারে আবার পাটের দাম কম। যেখানে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ফসল ঘরে তুলতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। সেখানে সমুলে পাট পাওয়া যাবে ১০ থেকে ১২ মণ। যার ফলে এবছর পাট চাষে করে লোকশানে পড়তে হবে।
পাট ব্যাবসায়ী মহির আলী বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৯”শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা কম থাকাই স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমে গেছে পাটের। আমাদের জেলায় অধিকাংশ পাট ব্যাবসায়ীর গোডাউনেই রয়েছে পুরানো পাট। তার উপর আবার যদি নতুন পাট বাজারে আসে। এমনিতেই পাটের বতর্মান বাজারদর আরো কিছুটা কমে যাবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, বর্তমানে জেলার অধিকাংশ পাট প্রায় কর্তনের সময় হয়েছে। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে পাট কাটা ও জাগ দেয়া শুরু হয়ে যাবে। এ শেষ সময়টিতে মাটির নিচ থেকে লবণাক্ততা বের হওয়ার কারনে অনেক জমির পাট মারা যাচ্ছে। আবার তিড়িং পোকায় পাটের পাতা ও ডোগা কাটছে। এ থেকে পাটকে রক্ষার জন্য জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এখন বৃষ্টির সময়,পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাত হলে তিড়িং পোকার আক্রমণ ও লবণাক্ততার কারনে পাট মরে যাওয়ার হাত থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৭ জুলাই ২০২৩
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post