কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় আধিপত্য ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর,অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মিদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন কর্মি আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের এক সদস্যও আহত হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, যুবজোটের নেতাকর্মিদের হামলায় গতকাল বুধবার (৯ আগষ্ট) সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক মারা যান।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সকাল সাড়ে দশটার দিকে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগ,স্বেচ্ছালীগের নেতাকর্মিরা ভেড়ামারা শহরের ডাকবাংলার সামনে জড়ো হয়। এরপর তারা লাঠিশোটা দিয়ে মামলার প্রধান আসামি ও জেলা যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমান শোভনের কাচারীপাড়ায় ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন দেয়। এরপর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। পাশে চাচার দোতলা বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের অপর চাচা জানবারের রড সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় এবং সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে শহরের গোডাউন মোড় এলাকায় আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের ভগ্নিপতি রবিউল ইসলামের দোতলা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে দোতলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে থাকা আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
রবিউল ইসলামের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন যুবক অস্ত্র লাঠিশোটা নিয়ে রবিউল ইসলামের বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ও ভয়াবহ ভাঙুচুর চালায়। পরে দোতলায় থাকা মজুদ টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। এসময় ঘরের এসি বিষ্ফোরণ ঘটে। বিভিন্ন কক্ষে থাকা আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এছাড়া শহরের বামনপাড়ায় মামলার দুই নম্বর আসামি ইয়ামিন হোসেনের বাড়ি ও চাচা সালাউদ্দীনের পৃথক দুটি দোতলা বাড়িতেও হামলা চালায়। ইয়ামিনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর হামলকারীরা শহরের ভেড়ামারা – দৌলতপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। পরে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের অন্তত সাতজন কর্মী ও এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদেরকে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক ও চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোলাইমান মাস্টার বলেন, আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা ডাকবাংলোর সামনে অবস্থান করছিলাম। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তৃতীয় পক্ষের কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তিনি জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ন ভাবে অবস্থান করছিলাম। আসামীরা ইতিপূর্বে অনেক অপকর্মের ঘটনা ঘটিয়েছে অতীতের ক্ষতিগ্রস্ত ও বিক্ষুদ্ধরাই এ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দলের কেউ এতে জড়িড নয়। তবে কিছু ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের সমাবেশে আসার পথে পুলিশ হামলা করে। এতে ৬ থেকে ৭ জন আহত হয়েছে।
উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান শোভন তার ব্যক্তিগত শত্রুতার কারনে সেচ্ছাসেবক লীগের নেতার উপর হামলা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান শোভন যেহেতু জেলা যুবজোটের নেতা ছিলেন। তাই এঘটনাই দল দুঃখ প্রকাশ করেছে ও আমরা শোভনকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। কিন্তু এঘটনাকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগের কিছু অতিউৎসাহী নেতাকর্মী এ ঘটনায় জাসদকে জড়ানোর চেষ্টা করছে।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর পরই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। শহরজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post