ভরা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকে এখন আগাম শীতকালিন সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূযোর্গে না থাকলে খুব অল্প সময়ে সল্প খরচে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন মেহেরপুর জেলার চাষিরা। কৃষি বিভাগের দাবি আগাম জাতের কপি চাষ করে চাষিরা অল্প সময়ে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব ।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার তিন উপজেলায় ১৮৪ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি ও ৪৩ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত আগাম শীতকালিন কপির আবাদ সর্বোচ্চ। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি কৃষি ক্ষেত্রেও ঘটছে উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা। আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপিগুলো দেখতেও বেশ চমতকার এবং খেতে সুস্বাদু। আগাম হওয়ার কারণে বাজারে এর চাহিদা বেশি। পাশাপাশি খুব বেশি কৃষক এ আবাদ না করায় ভালো দামে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। আবার অনেকে নিজেরাই স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে ভালো দামে রপ্তানি করছেন। তবে আগাম জাতের এসব কপি মেহেরপুর জেলায় চাহিদা কম থাকলেও চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ঢাকায় ভালো চাহিদা থাকে। ফলে ভালো দামে ক্ষেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি। আগাম শীতকালিন ফুলকপি ক্ষেত থেকেই ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যেখানে উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২০—২৫ হাজার টাকা। প্রায় একই উৎপাদন খরচে বিঘা প্রতি লাখ টাকা ছাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে বাধাকপি। এতে অল্প সময়ে ভালো লাভের মুখ দেখেছেন কৃষকরা। তবে অতিরিক্ত বর্ষা হলে ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকরা। চলতি বছরে যেহেতু বর্ষা মৌসুমে বর্ষা কম হয়েছে, তাই রোগবালাই কম হওয়ার পাশাপাশি পচার হাত থেকেও বেঁচে গেছে ক্ষেত।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সবজি ক্ষ্যাত সাহারবাটি গ্রামের ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, আগাম শীতকালিন সবজি। চাষিদের কাছ থেকে আমি থাইকো ক্রয় করি। এবছরে এখন পর্যন্ত আমি ৬০ বিঘা জমির বাধাকপি ও ফুলকপি চট্রগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও বরিশালের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করেছি আরও করব। এসব এলাকায় প্রচুর চাহিদা থাকায় আমি নিজের এলাকার ক্ষেত থেকেই সবজি পুষ্ট না হতেই ক্রয় করে ফেলি। ফুলকপি বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ও বাধাকপি ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিঘা ক্রয় করেছি। শীত মৌসুম ছাড়াও আগাম শীতকালিনের চাহিদা বেশি। কারণ আগাম জাতের কপি অল্প কৃষকরা চাষ করে, ফলে চাষিরা ভালো টাকা পেয়েছে। আবার আমরা ব্যবসায়ীরাও লাভবান হয়েছি। তবে আমাদের এলাকায় আগাম জাতের সবজির চাহিদা কম থাকে। ফলে দেশের বিভিন্ন মোকামে আমরা বিক্রি করে থাকি।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আগাম শীতকালিন সবজি বৈশাখ মাস থেকে শুরু হয়ে শীত আসলে শেষ হয়ে যায়। আগাম শীতকালিন বাধাকপি ও ফুলকপিতে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সার,
কৃটনাশকসহ বিভিন্ন পরিচযার্য় খরচ থাকলেও সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কৃটনাশকে। কিন্তু খুব অল্প সময়ে ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চলতি বছরে কপি বিক্রি হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের আগাম বাধাকপি চাষি আলি হোসেন জানিয়েছেন, চলতি বছরে আমার ৮ কাটা জমিতে আগাম জাতের বাধাকপি ছিলো। ক্ষেত থেকেই ৩৩ হাজার টাকায় কপি বিক্রি করে দিয়েছি। আমার কপিতে ১০—১২ হাজার টাকা খরচ হলেও ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমি প্রতি বছরই আগাম শীতকালিন এই কপির আবাদ করি। তিন মাসও লাগে না এতে আমার লাভ ভালো হয়।
মেহেরপুরের স্বরণ মিয়া জানান, আমি সবজির ব্যবসা ও চাষবাদ দুইটা করে থাকি। স্থানীয় ফরিয়া হিসেবে বিভিন্ন চাষিদের জমি থেকে থাইকো বাধাকপি ও ফুলকপি কিনে থাকি । আগাম শীতকালিন ফুলকপি ও বাধাকপিতে তুলনা মূলক অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি লাভ হয়। একজন চাষির লাখ টাকা আয়ের সুযোগ আছে, খরচ কম হলেও লাভবান বেশি হওয়া যায়। বর্তমানে বাধাকপি—ফুলকপির টান বেশি। কারণ শীতকালে সবজি একসাথে উঠে কিন্তু আগাম সময়ে খুব কম লোকই সবজির আবাদ করে। আমরা বিভিন্ন জমিতে যায়, ক্ষেতের পরিমাপ করি, বাজার দর যাছাই—বাছাই করি, রোগ বালাই আছে কিনা ভালো—মন্দ বাচবিচার করে দরাদাম করে ক্রয় করে থাকি। এরপর আবার নিজেরাও অনেক সময়ে পরিচর্যা করে থাকি। চলতি বছরে আমরা সর্বনিম্ন ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সবচ্চর্ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় বিঘা কপি ক্রয় করেছি। এতে শুধু চাষি নয় চাষি এবং ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হয়েছে।
মেহেরপুরের মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, আমি একবিঘা জমিতে চলতি বছরে বাধাকপি আবাদ করেছি । ভালো কপি হওয়ায় ১ লক্ষ ২ হাজার টাকায় বিক্রি করি ।
একসাথে অনেক টাকা লাভ হয়েছে। আমি অবশ্যই প্রতি বছরই আগাম জাতের সবজি চাষ করে থাকি। প্রতিযোগিতা না থাকায় ভালো দামে বিক্রি করতে পারি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক শংকর কুমার বলেন মেহেরপুর জেলা একটি সবজি উৎপাদন এলাকা। এ জেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়ে থাকে তারমধ্যে বাধাকপি ও ফুলকপি চাষিরা ব্যাপক আকারে চাষ করে। এরআগে বাইরোটেশনে চাষ হয়েছিল। আমাদের জেলায় আগাম বাধাকপি ১৮৪ হেক্টর চাষ হয়েছে এবং ফুলকপি ৪৩ কপি
হেক্টর চাষ হয়েছে। দের মাস দুই মাস পর পর চাষিরা হারভেস্ট করে আবার চারা লাগায়, এভাবে চাষিরা আপনার শীত মৌসুম আসতে আসতে তারা তিন চারবার সবজি উৎপাদন করে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের জেলায় উৎপাদিত সবজি রপ্তানি করে চাষিরা লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে। আগাম শীতকালিন সবজি একটি ভালো লাভজনক ফসল এতে চাষিরাও লাভবান হচ্ছে, দেশও লাভবান হচ্ছে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৮ আগষ্ট ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post