পটুয়াখালীর শহরতলীগুলোতে মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। এই বাহন চালিয়ে দুবেলা দুমুঠো ভাতের যোগান দেয় খাওয়া মানুষ। নিজেদের তিলে তিলে জমানো অর্থ বা কোনো এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনে তা দিয়ে জীবন যাপন করেন কিছু মানুষ। তবে তাদের রাস্তায় চলতে হলে দিতে হয় চাঁদা। নতুবা অটো চলতে পারে না রাস্তাতে। নিজের আয়ের টাকার একটি অংশ তুলে দিতে হয় রাস্তার মোড় বা নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদাবাজদের হাতে। তবে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে ভয় পান অটোরিকশা চালকরা। অটোরিকশার সিরিয়ালের নামে এসব টাকা উঠানো দৃশ্য হর হামেশাই দেখা যায় জেলার বিভিন্ন স্থানে। এমনই কিছু ঘটনার দেখা মিলেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়। এই উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে অটোরিকশার সিরিয়ালের নামে চাঁদা তুলছে গলাচিপা উপজেলা ও পৌর শ্রমিকলীগের একটি অংশ। সবার চোখের সামনেই উপজেলার পৌর এলাকার তিন থেকে চারটি পয়েন্ট থেকে প্রত্যেকদিন গড়ে আঠেরো থেকে বিশ হাজার টাকা চাঁদা তুলছে শ্রমিকলীগের কিছু নেতা কর্মীরা।
গলাচিপা শহরের অটোরিকশা চালক রমজান বলেন, “আমরা শহরে বাইরে যাই না। শহরের মধ্যে এক এলাকা থেকে যাত্রি অন্য এলাকাতে নামিয়ে দিয়ে আবার যাত্রির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর তখন ওই এলাকাতে আমাদের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর এই সিরিয়ালের জন্য কোথাও দশ টাকা আবার কোথাও বিশ টাকা করে দিতে হয়। আর একটু শহরের বাইরে গেলে সেখানের সিরিয়ালের লোকজনকে পঞ্চাশ টাকা দিতে হয়। শ্রমিকলীগের নেতাদের এই টাকা আমাদের দিতে হয় সিরিয়ালের জন্য।
আরেক অটো চালক মোঃ ইসমাইল বলেন, “সিরিয়ালের প্রয়োজন হলে আমরা নিজেরাই দিতে পারি। কিন্তু এই সিরিয়ালের নামে শ্রমীকলীগ আমাদের থেকে আমাদের কষ্টের টাকা নেয়। এখন এইরকম কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম আছে কিনা আমি জানিনা।
গলাচিপা কলেজ মোড়ে অটোরিকশা সিরিয়াল থেকে টাকা নিতে দেখা যায় উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিনকে। অটো থেকে তিনি কিসের টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সিরিয়ালের টাকা। কার পর কে যাবে এটা নির্ধারন করে দেন তিনি। আর প্রতি অটো থেকে নেন মাত্র দশ টাকা করে। এর বেশি কথা বলতে তিনি রাজি হননি।
উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে গুলোতেও দেখা গিয়েছে একই চিত্র।
এবিষয়ে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সন্তোষ কুমার দে জানান, তিনি এবিষয়টি জানেন। এবিষয়ে তিনি তার উপর মহলের নেতৃবৃন্দের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকলীগ নিয়ন্ত্রণ করতো উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা টিটু। কিন্তু তিনি একটি দুর্ঘটনার কারনে অনেক বেশি অসুস্থ তাই এটি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গলাচিপা উপজেলা শ্রমিকলীগ এখন চলছে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ইব্রাহিম দফাদার বলেন, আমরা এই টাকা উঠানোর বিষয়ে কিছুই জানি না। এটা পৌর শ্রমিকলীগ হয়তো জানতে পারে। আর জেলা থেকে পৌর শ্রমিকলীগের কমিটি দেয়া হয় তাই আমরা চাইলেও কোন ব্যাবস্থা নিতে পারি না।
এদিকে পৌর শ্রমিকলীগের সভাপতি আবু সালেহ মুসুল্লি বলেন, গলাচিপা শহরে বাইরের অটোরিকশা ঢুকলে শহরে গেদারিং হয়। আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এখানে শুধু সিরিয়াল দিয়ে সিরিয়ালের দায়িত্বে যে থাকে সে দশ টাকা করে নেয়। এর বাইরে কোন টাকা নেয়া হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এবিষয়ে জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক শিহাব মোঃ সগির বলেন, আমরা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করি। শ্রমিকলীগের কেউ এমন কোন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন মানুষের সাথে এমন কাজ কাম্য নয়। এ ধরনের অন্যায় কখনো সহ্য করা হবে না।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমি এই ধরনের কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। এরকম অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post