সিলেট অফিস:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ও চুনা পাথরের উপর শুল্ককরবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও শুল্ককর হ্রাসের দাবীতে ভারত থেকে সকল প্রকার পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসের প্রথম দিকে শুল্ককর বৃদ্ধি করা হলে তামাবিল কয়লা আমদানি রপ্তানি কারক গ্রুপের ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৮ই জানুয়ারি থেকে সকল প্রকার পাথর আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
দীর্ঘ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় পাথর কেন্দ্রীক সকল ক্রাশারমিল কারখানায় দেখা দিয়েছে পন্যের সংকট। একমাত্র তামাবিল স্থলবন্দরে আমদানির উপর নির্ভরশীল জৈন্তাপুর উপজেলার মিলকারখানাগুলোর প্রায় ৭৫% মিল পাথরের অভাবে বন্ধ রয়েছে।
যার কারণে জৈন্তাপুর উপজেলার ক্রাশার মিল কেন্দ্রিক প্রতোক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ হাজারের বেশী শ্রমিক বেকার হওয়ার উপক্রম।
সাধারণত তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পাথরের উপর শতভাগ নির্ভরকরে জৈন্তাপুর উপজেলার কাটাগাঙ, কদমখাল,বাংলাবাজার, আসামপাড়া, শ্রীপুর ও আলুবাগান এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকশ ক্ষুদ্র ও মাঝারী ক্রাশারমিল।
এই মিল গুলোতে সপ্তাহে ছয়দিন পাথর ভেঙে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নির্মানকাজের জন্য ট্রাক যোগে সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন জৈন্তাপুর উপজেলা সহ পাশ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার আলিরগাও, কানাইঘাট উপজেলার চতুল এলাকা সহ বিভিন্ন স্হান থেকে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক ক্রাশার মিলে কাজ করে।
তাছাড়া তামাবিল থেকে জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্পটে ক্রাশার মিল গুলোতে পাথর পরিবহনের জন্য ট্রাক চালক ও লোডআনলোড শ্রমিক আছে আরো হাজার চারেক এর মত।
এ পাশাপাশি ক্রাশিং করা পাথর আন্তঃজেলা ট্রাকে লোক করার জন্য বেলচা শ্রমিক রয়েছে পুরো উপজেলায় তিন থেকে চার হাজারের মত। এ ছাড়াও হেমার শ্রমিক, মিল চালানো শ্রমিক, মিল সংস্কার শ্রমিকের মত পরোক্ষভাবে কাজ করে আরো এক হাজারের মত শ্রমিক।
প্রতিদিন উপজেলার ক্রাশার মিলগুলো চালু থাকলে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর শ্রমিকেরা প্রতোক্ষ ও পরোক্ষভাবে শ্রমকাজের সাথে জড়ীত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু ভারত থেকে পাথর না আসায় ক্রাশার মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সমস্ত শ্রমিকদের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়।
বৃহত্তর জৈন্তা ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি অলিউর রহমান ইদন জানান, শুধুমাত্র তামাবিল থেকে বিভিন্ন মিল পাথর পরিবহন কাজে উপজেলার কয়েকশো ট্রাক চলাচল করে। এই ট্রাকগুলো বর্তমানে পাথরের ট্রিপ না থাকায় ট্রাক শ্রমিক ও মালিকপক্ষ উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
৪ নং বাংলাবাজার ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মালিক বলেন, এই এলাকায় প্রায় ১০০টির মত ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে পাথর সরবরাহ করা হয় যার কারণে কয়েক হাজার বেলচা শ্রমিক দৈনন্দিন তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু পাথর আমদানির উপর শুল্ককর বৃদ্ধিতে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন যেভাবে হবেন ঠিক সেই ভাবে পাথর না আসলে অত্র এলাকার হাজার হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জৈন্তাপুর ছিন্নমূল মিনি স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবু সুফিয়ান বিলাল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমদানি করা পাথরের উপর শুল্ককর বৃদ্ধি করা হলে শুধু আমদানিকারকই না বরং মিলমালিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কেননা দেশের অন্যান্য স্হল বন্দর দিয়ে আসা পাথর ও তামাবিল এলাকার পাথরের মধ্যে দামের ব্যবধান হবে অনেক। যার কারণে আমদানি কারক ব্যাবসায়ীরা বাধ্য হবেন পাথরের দাম বৃদ্ধি করতে। এর ফলে সিলেট অঞ্চলে পাথর বিক্রি পড়বে চেলেন্জের মুখে।
তারা বলেন, উপজেলার অধিকাংশ মিল মালিকেরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন তুলে ব্যাবসায় বিনিয়োগ করেছেন। পাথর সংকটের কারণে মিল বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিকের মত অনেক ক্রাশার মালিকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তারা অনতিবিলম্বে আমদানিকারকদের দাবীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে আমদানি করা পাথরের উপর অতিরিক্ত শুল্ককর প্রত্যাহারের দাবী জানান।
তামাবিল কয়লা চুনাপাথর আমদানি রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলি বলেন, ভারত থেকে ৮ ডলারে পাথর কিনে তার ডিউটি বা এসিসমেন্ট সাড়ে ১১ ডলার করে দিয়ে আসছিলো ব্যবসায়ীরা। গত আগষ্ট মাসে তা ৭৫ সেন্ট বাড়িয়ে ১২ডলার ২৫সেন্ট করে। তারপরও ব্যাবসায়ীরা তা মেনে নিয়ে পাথর আমদানি অব্যাহত রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তিন মাস না যেতেই পুনরায় এসিসমেন্ট আবারো ১দশমিক ২৫ ডলার বৃদ্ধি করা হয়েছে যা আমদানি কারকদের মারাত্মক লোকশানের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দেশের অন্যতম আমদানী রপ্তানি কারক স্পট হিলি স্টেশন দিয়ে বিশ্বের নামকরা কোয়ালিটির পাথর যা আমদানিকারকেরা ভারত থেকে ১৪ ডলারের কিনে তার বিপরীতে ডিউটি দিচ্ছে ১৪ ডলার। সে অনুযায়ী তামাবিল সহ সিলেটের অন্য শুল্কষ্টেশন দিয়ে আমদানি করা পাথরে বার বার লোকশান গুনতে হয় আমদানি কারকদের।
তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে শুল্ককর হ্রাস না করা হলে পাথর আমদানি কোন ক্রমেই সম্ভব নয়, ফলে পাথর সংশ্লিষ্ট মিল কারখানা শ্রমিক, পরিবহন সেক্টর সহ হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জানুয়ারী ২১,২০২৪//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post