নিজস্ব প্রতিবেদক : কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় বিনা চাষে সরিষার আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা ধানী জমিতে ধান কাটার ৮-১০দিন আগেই সরিষার বীজ বপন করে। ধান কর্তন করে সার এবং সেচ দিয়ে সরিষার চাষ করছে মিরপুরের কৃষকরা। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয় কোন জমি পতিত না রেখে বিনা চাষে সরিষার আবাদ করার জন্য। কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলুদ সবুজে মোড়ানো সরিষা ফুলে ছেয়ে আছে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার মাঠ। উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ যেন সবুজের মাঝে হলুদ ফুলের সমারোহ।
কোন কোন জমিতে সরিষায় পাক ধরেছে। আগাম যে দু‘একজন কৃষক সরিষার চাষ করেন তারা জমি থেকে সরিষা সংগ্রহ করছেন।
সরিষার হলুদ রঙের ফুলে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে আপন মহিমায় মোহবিষ্ট। মৌমাছির মৌ-মৌ গন্ধে সরব হয়ে উঠেছে মাঠের সরিষা ক্ষেত।
মিরপুরের মাঠে বিস্তৃর্ণ সরিষা ক্ষেত বলে দিচ্ছে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। কৃষকের চোখে আনন্দের ঝিলিক। চলতি বছরে মিরপুরে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। আর সরিষার খৈল জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে। সময় এবং খরচ কম হওয়ায় জেলায় সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে ও সরিষা চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭-৮ মণ সরিষা উৎপাদন হবে। লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে মিরপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ বেশী হয়েছে। চলতি রবি শস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরিষাক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, হিসেব মতে চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮০৮ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ২ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। য গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় সরিষার চাষ বাড়ছে। পাশাপাশি এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ পেলে মানুষ আবার সরিষা আবাদে ফিরে আসবে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও তিনি আশাবাদী।
উপজেলার মশান গ্রামের সরিষাচাষী আনোয়ার আলী জানান- জমি চাষে খরচ না হওয়াতে বিঘাপ্রতি সরিষা চাষে খরচ হচ্ছে সর্বচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতিমণ সরিষা বিক্রি করা যাবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘাতে সাতমণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া মাত্র তিনমাস সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমাণ না থাকায় সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উপজেলার ধুবাইল গ্রামের সরিষা চাষী আবুল হোসেন বলেন- নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে।
মিরপুর উপজেলার খাঁড়ালা গ্রামের কৃষক আলিমর রেজা সুমন এক বিঘা জমিতে বারী ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে মাঠ থেকে সরিষা সংগ্রহ করেছেন। ফলন বেশ ভালোই হয়েছে বলে জানান তিনি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন- দেশি সরিষার চেয়ে বিনাচাষে বারি উদ্ভাবিত সরিষার জাতে ফলন বেশি। অনেক কৃষক আমন ধান সংগ্রহের আগেই ধানি জমিতে সরিষার বীজ বপন করছে কৃষকরা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারে সরিষা এবং ভোজ্য তেলের চাহিদা বেশী। আমন ধান কাটার পর দুইমাস সময় জমি পড়ে থাকে। এই সময় বিনাচাষে ওই সময় সরিষা চাষ করলে তেলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,২৪ জানুয়ারি ২০২৪

Discussion about this post