নিজস্ব প্রতিবেদক \ কুষ্টিয়ায় শরিকানা জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে আপন ভাই ও ভাতিজার বিরুদ্ধে। আদালতে মামলা করে প্রাণনাশের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন মামলার বাদী আপন বড় ভাই। তিনি অবরুদ্ধের পর গত শুক্রবার প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে থানায় এসে অভিযোগও করেছেন বলে জানা যায়।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ, মামলার নথি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মাজিহাট গ্রামের মৃত আইনাল আলী সর্দারের পাঁচ ছেলে দুই মেয়ে। স্থানীয় মাজিহাট বাজারের পাশে তাদের বসত বাড়ির প্রায় ৩৫ শতক জমি রয়েছে। আইনাল সর্দারের দুইপুত্র তৈয়ব আলী ও শাহার আলী গত ৭ জুন-২০২৩ তারিখে অন্য ভাই-বোনদের জমি দখল করে দোকান নির্মানের চেষ্টা করে। সে সময় মিরপুর থানায় অভিযোগ করলে মিরপুর থানা পুলিশ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের শুনানী করে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সকল শরিকদের মধ্যে বুঝিয়ে দেন। এদিকে গত ১৯ নভেম¦র-২০২৩ তারিখে মাজিহাট মৌজার ৩৩৩ খতিয়ানের ৫০৪২ দাগের গোয়ালপাড়ায় রাস্তা সংলগ্ন ৩৫ শতক জমি আবারো দখলে নিতে যায় তৈয়ব আলী। এসময় তার বড় ভাই আব্দুল ওহাব আলী জমিতে গেলে তাকে শারিরীকভাবে লাি ত ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এব্যাপারে আব্দুল ওহাব আলী বাদী হয়ে ১৪ নভেম্বর-২০২৩ তারিখে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মিস ৯২৩/২০২৩ নং মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে নালিশি জমির ফটো/পিকচার ধারন করে কোর্টে দাখিলের জন্য মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার বাদী আব্দুল ওহাব আলী গত বুধবার ২৮ ফেব্রæয়ারি সকাল সাড়ে ১১ টার সময় নালিশি জমির ছবি মোবাইলে ধারন করে বাড়ি ফিরছিলো।
এ সময় তার আপন ছোট ভাই তৈয়ব আলী জমি সংলগ্ন রাস্তায় তার গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মেরে আব্দুল ওহাবের জামা-কাপড় টেনে-ছিড়ে প্রায় বিবস্ত্র করে ফেলে। এসময় ছবি ওঠানোর কারনে তার হাত কেটে নেয়ার হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদান করে।
পরেরদিন বৃহস্পতিবার ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় ভ‚মিদস্যু তৈয়ব আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম লাঠি-শোঠা ও ধারালো রামদা নিয়ে বাদী আব্দুল ওহাব আলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাড়ির সামনে অবস্থান করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় সে ও তারর স্ত্রী নিজ বাড়ির মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ হামলার ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ১মার্চ জমি ভ‚মিদস্যু তৈয়ব আলী, তার ছেলে তরিকুল ইসলাম এবং অপর ভাই শাহার আলী ও ছেলে রকিবুল লাঠি-শোঠা, ধারাল রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মামলার বাদী আব্দুল ওহাব আলীকে মারপিট ও হত্যার উদ্দেশ্যে ওহাবের বাড়িতে প্রবেশ করলে সে বাড়ি থেকে কোন মতে পালিয়ে রক্ষা পায়। এসময় তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী, মেয়েদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। পরে গত শুক্রবার ১মার্চ সন্ধ্যায় আব্দুল ওহাব কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, তৈয়ব আলী অনেক আগে থেকেই দস্যু প্রকৃতির লোক। তার বড় ভায়ের তিনটি কন্যা সন্তান ও ছোট ভায়ের দু’টি কন্যা সন্তান থাকায় সে ঐ দুই ভায়ের এবং বিবাহিত দুই বোনের জমি ও দোকানের পজিশন দখলের জন্য মরিয়া উঠেছে।
তারা আরো বলেন তৈয়ব আলীর বিরুদ্ধে প্রথম পক্ষের স্ত্রী আফরোজা খাতুনকে পিটিয়ে হত্যা, প্রথম পক্ষের শিশু সন্তাকে গলায় গামছা পেছিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা অভিযোগ রয়েছে তৈয়ব ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে। মাজিহাট কলিপুরের জনৈক স্থানীয় জানিয়েছে শাহার আলী একজন বিকারগ্রস্থ মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতা। ইতিপূর্বে তাকে পুলিশ গ্রেফতারসহ নির্বাহী আদালতে মাদক মামলায় জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে দিয়েছে। তারপরও তার গাজা সেবন ও গাজা বিক্রয় থামেনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, মামলার বাদী আব্দুল ওহাব আলী বলেন, অবৈধভাবে জমি দখলকারী তৈয়ব আলী একজন দূর্ধষ প্রকৃতির লোক। তার ছেলে তরিকুল এবং অপর ভাই মাদকাসক্ত শাহার আলী ও তার ছেলে রকিবুল ভ‚মি জবর দখল কারি সন্ত্রাসী। আমি আদালতে মামলা করেছি, আদালত শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে উভয় পক্ষকে জমিতে না যাওয়ার জন্য ১৪৪ ধারায় নিষেধ করেছে। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলেছে। তিনি আরো বলেন, আমার ভাই তৈয়ব আলী ও শাহার আলী মাজিহাট মৌজার চোরাবিলের মাঠের ২৫ শতক ও খামারের মাঠের ৩৭ শতক জমি দখলের জন্য এখনো হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা পৈতৃক সম্পত্তি বিভাগ বন্টন না করেই নিজেদের মতো করে সব দখলে নিচ্ছে।
তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আমি ও আমার পরিবার জান-মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। তারা যে কোনো সময় আমার ও আমার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে। মামলা তুলে নিতে তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাই আমি মিরপুর থানায় অভিযোগ করেছি। আমি প্রশাসনের কাছে আমার ও আমার পরিবারের নিশ্চয়তা চেয়েছি।
অভিযুক্ত তৈয়ব আলী বলেন, জমি আমার বাবার নামে, পরে আমার ছেলের নামে, তারপরে আমার নামে, তারপরে আমার স্ত্রীর নামে। শরিকের এজমালি জমি বন্টন নামা দলিল না করে জমি রেজিস্ট্রি হয় কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহার আলী বলেন, সেটা আদালত বুঝবে, মামলায় যে রায় হবে আমরা তা মেনে নেবো।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পকে নজরদারির জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২ মার্চ ২০২৪

Discussion about this post