নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ায় আমিরাত লুবে ওয়েল ইন্ডাষ্ট্রিসের কর্মী জাহাঙ্গীর আলমের (৪০) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শহরের কমলাপুরস্থ ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝলন্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে।
তবে পরিবারের দাবী, এটি আতœহত্যা নয়, কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে জাহাঙ্গীরকে হত্যার পর গলায় রশি বেঁধে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। গত ৬ মার্চ সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহতের স্ত্রী রুবিনা আক্তার জানান, গত ৬ মার্চ সকাল ৮ টারদিকে জাহাঙ্গীর আলম তার নার্সারী পড়–য়া মেয়েকে মাদ্রাসায় পৌঁছে দেন। এরপর সকাল সাড়ে ১১ টারদিকে স্বামী-স্ত্রী বাসায় তালা মেরে একসাথে বেরিয়ে যান।
জাহাঙ্গীর যশোর থেকে আগত ঐ মবিল কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার জাহিদের সাথে দিনভর মার্কেটিং কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং স্ত্রী রুবিনা ছুটি শেষে মাদ্রাসা থেকে মেয়েকে আনতে যান। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবিনা মেয়েসহ বেলা ১২ টারদিকে বাসায় ফিরে বারান্দার দরজায় পৃথক কায়দায় তালা লাগানো দেখতে পান।
এরপর তিনি তালা খুলে ঘরের ভিতরে প্রবেশের পর ডাইনিং টেবিলের উপর জাহাঙ্গীরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পড়ে থাকতে দেখে স্ত্রী রুবিনার সন্দেহ ঘনীভুত হয়।
পরে ফ্রীজের কোনায় ফ্যানের সাথে জাহাঙ্গীরের লাশ ঝুলে থাকতে দেখেন তিনি। ঘটনার পর তার আর্ত চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। বাড়িওয়ালার ছেলে হারুন-অর-রশিদসহ স্থানীয়দের সহয়তায় লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ২৫০ শষ্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের পর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার দিন ৬ মার্চ এরিয়া ম্যানেজার জাহিদের সাথে দিনভর কাজে ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরবর্তীতে মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধানে ঘরের মধ্যে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি খুবই রহস্যজনক বলে নিহতের স্ত্রী-পরিবারের দাবী। এটি আতœহত্যা নয়, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কে বা কারা জাহাঙ্গীরকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল বলে স্ত্রী রুবিনার দাবী। জাহাঙ্গীর ছিলেন সদাপালী ও ধর্মভিরু। নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। এছাড়া আগামী বছর তার ওমরাহ পালনের প্রস্তুতি চলছিল। জাহাঙ্গীরের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গ্রামে।
চাকরী সুবাদে তিনি কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুর এলাকায় সপরিবারে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। জাহাঙ্গীর হত্যাকান্ডে আমিরাত লুবে মবিল কোম্পানীর কুষ্টিয়াস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোজসাজশ থাকতে পারে নিহতের পরিবারের সন্দেহ। এঘটনায় প্রাথমিকভাবে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
পরিবারের পক্ষে হত্যাকান্ড দাবী করা হলেও এখনো থানায় এবিষয়ে অভিযোগ দেয়া হয়নি। তবে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে নিহতের স্ত্রী রুবিনা জানিয়েছেন। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধা মা খাদিজা বেগম পাগলপ্রায়। তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে দাবী করে তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, লাশের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১১ মার্চ ২০২৪

Discussion about this post