নিজস্ব প্রতিবেদক:নেছারাবাদে জোড়ালো মনিটরিংয়ের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকলেও কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীর ঘাটতি নেই ।
প্রায় সম সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে অন্তত ১০ থেকে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর শিক্ষার্থী সংকট থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক,কর্মচারীর বেতন ভাতা ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারকে বছরে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
সরেজমিন ও তথ্য প্রমানে জানা গেছে দক্ষিন ধলহার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (সাবেক রেজিঃ) একজন শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও দুইজন শিক্ষককে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিচ্ছেন সরকার। এছাড়াও গনপতিকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে ১৪ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ৭-৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৪জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। দুই বছর আগে এ বিদ্যালয়ের জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি তিনতলা সাইক্লোন সল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মান করা হয়। থালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাগজ পত্রে ৩৭ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে আছেন ১৮-২০ জন। ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক আছেন ছয়জন। সম্প্রতি দুজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে অন্য বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। শান্তিহার কুনিয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাগজপত্রে ১৯জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে আছে ১২-১৪জন। এ বিদ্যালয় থেকে মাত্র তিন’শ মিটার দুরে শান্তহার নামে আরো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুরূপ অবস্থা। মৈশানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে ১৯ জন শিক্ষার্থী। এছাড়াও পশ্চিম জৌশার, জুলুহার মঠবাড়ি, সৌমিক মেমোরিয়াল, রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্যাসকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রমেশচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৭-৮ জন থেকে ৪০জনের মধ্যে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে ৪ থেকে ৫জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশীরভাগই সাবেক রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যাল। এগুলোকে যাছাই বাছাই না করেই ২০১৩ সালে জাতীয় করণ করা হয়। এছাড়াও ৫০ থেকে ৭০জন শিক্ষার্থী আছে এমন প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে আরো ৩৫টি ।
উপজেলার দক্ষিণ ধলহার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও দুইজন শিক্ষককে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিচ্ছেন সরকার। এবছর একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি ওই বিদ্যালয়ে। উপরন্তু পুরোনো ২-৪ জন যারা ছিল তারাও অন্যত্র চলে গেছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা নুরজাহান বলেন, গত বছর ৪-৫ জন শিক্ষার্থী থাকলে এবার একজনও ভর্তি হয়নি । তিনি বদলী হওয়ার জন্য বার বার আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান। এছাড়াও বাড়িতে বসে বেতন পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠাতার কন্যা সহকারী শিক্ষক সুপ্রিয়া রানি মিস্ত্রি।
থালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিত্যানন্দ বেপারী বলেন,তাদের এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত এবং ওই এলাকায় জন্মহার একেবারেই কম। সে কারনে শিক্ষার্থী সংকট কাটানো কঠিন কাজ বলে তিনি দাবী করেন।
বছরের পর বছর এতকম সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকার পরেও ওইসব বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে কোন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো, নাসির উদ্দিন খলিফা বলেন, সাবেক রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে এ জাতীয় সমস্যা একটু বেশি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটিকে বিভিন্নভাবে চাপসৃষ্টিসহ নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছেন ।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post