মোমেছুর রহমান \ কুষ্টিয়া জেলায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। পানির জন্য রীতিমত হাহাকার পড়ে যাচ্ছে। ফসলের মাঠ, পুকুর, জলাশয় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। নদ-নদীতে পানি নেই। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১৫শত নলকূপ।
কুষ্টিয়ার অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা-গড়াই নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন এ অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ সেচ সংকটে জেলার সর্বত্র দেখা দিয়েছে হাহাকার পরিস্থিতি। ফারাক্কার প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খুলনা বিভাগের নদ-নদী কম হওয়ায় এ বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর তুলনামূলক বেশী নেমে গেছে। বর্ষাকালের তুলনায় এর ব্যবধান প্রায় ২০ ফুট।
আগে যেখানে ১২/১৩ ফুট নিচে পানি পাওয়া যেত এখন সেখানে পানির স্তর ৩২/৩৩ ফুটের ও বেশি নিচে নেমে গেছে। এর ফলে বর্তমান সরকারী, বে-সরকারী মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার নলক‚প বন্ধ হয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় সরকারীভাবে স্থপিত নলক‚পের সংখ্যা ৩০ হাজার ৩শত ৫০টি।এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় রয়েছে ৬ হাজার ৯ শত ৯৭ টি, খোকসা উপজেলায় রয়েছে ২ হাজার ৯শত ৯৬টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫ হাজার ৮ শত ৬১ টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ৩ হাজার ১ শত ১০ টি, মিরপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৮শত ৩৫ টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৫ শত ৫১ টি।
এর মধ্যে চালু রয়েছে ২৮ হাজার ৯ শত ২০ টি। সম্পূর্ণ রুপে অকেজো হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৪ শত ৩০ টি। চালু থাকা সবকটিতেই কম পানি উঠছে। কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় সরকারী- সেরকারী মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার নলক‚প রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার বন্ধ রয়েছে ও অন্যগুলোতে পানি উঠছে কম।
অন্যদিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার গভীর নলক‚পের সাহায্যে পৌর এলাকায় যে পানি সরবরাহ করা হয়, সে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট এবং একই সমস্যার কারনে ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। গভীর ও অগভীর নলক‚প এবং পাওয়ার পাম্পগুলোতে যথারীতি পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফসলের জমিতে সেচ, গোসলের পানি, রান্না, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও অন্যান্য প্রত্যহিক প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। পৃথিবীর মোট পরিধির ৩ ভাগ পানি আর ১ ভাগ স্থল। পৃথিবীর এই বিশাল পানি রাশীর ৯৭ ভাগ সমুদ্রের লবনাক্ত পানি যার কারনে এই পানি সেচ কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী। অবশিষ্ঠ ৩ ভাগের মধ্যে ২.৩১ শতাংশ মেরু অ লের জমাট বাধা বরফ। বাকী ০.৬৯ ভাগ পানির মধ্যে ৯৬ ভাগ পানি ভূ-গর্ভের অভ্যন্তরে। পৃথিবীর বিশুদ্ধ পানির শতকরা ১ ভাগেরও কম পানি ব্যবহারযোগী বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। বিশুদ্ধ পানির অভাব যতটা না মানুষের ওপর প্রভাব ফেলেছে তার চেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করেছে কৃষি ক্ষেত্রে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির অভাবে মাটির উর্বর শক্তি নষ্ট হচ্ছে আর এ কারনে ফসলের যথাযথ ফলন হ্রাস পাচ্ছে। কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদী বছরের প্রায় ৮ মাস এ দু’টি নদীর প্রবাহ বন্ধ থাকছে। যার কারনে এ জেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ২৫টি নদী ও খাল-বিল মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। নদী ও খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারনে পানি সংকট দেখা দিয়েছে বেশী। ফারাক্কার প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, ভারত সরকার ১৯৭৪ সালে গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে। সেই থেকে গ্রীম্মকাল ইচ্ছে মতো পানি প্রত্যাহার করে নেয়।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,৪ জুন ২০২৪

Discussion about this post