মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শিল্প কারখানার দুষিত রাসায়নিক কেমিক্যাল এবং পচা ময়লা-আবর্জনা নদী, খাল বিল ও ডোবা নালা ফেলায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে দুভল আর দুষনে এলাকার পরিবেশসহ জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।
নদী, খাল ও বিলের পানি দুষিত হয়ে মরে যাচ্ছে মাছ, গাছপালা এবং ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের আশপাশ এলাকার জীব বৈচিত্রও হুমকির মুখে পরেছে।
অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা শিল্প কারখানার দুষিত বজ্য নদী ও খাল-বিলের পানি দুষিত হওয়ার ফলে ইরি বোরো আবাদসহ সবজি ও ফলজ বাগান এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পালা মরে যাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) গোড়াই শিল্পাঞ্চলেল কয়েকটি এলাকায় সরেমজিন ঘুরে কারখানার দুষিত বর্জ্য খাল, বিল, নদী, বিল ও ডোবা নালায় ফেলায় পরিবেশ চরম ভাবে হুমকির মুখের পড়ার ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকা মুলত পাহাড়ি ও উচু হওয়ায় ৯০ দশকের পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশপাশে ছোট, বড় ও মাঝারি মিলে অন্তপক্ষে অর্ধশত শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এলাকার সরকারী খাল বিল ভরাট করে একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে এসব শিল্পকারখানার অধিকাংশই অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে বলে এলাকার ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেছেন। শিল্পকারখানার মারিকদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রভাব শালী মহল গোড়াই এলাকায় অপরিকলি।পত ভাবে এসব কলকারখানা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন অসহায় পরিবার এসব অনৈতিক কাজে বাঁধা দিতে গেলে তাদের উপর হামলা ও মামলার ভয় দেখিয়ে চক্রটি কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। এখন বিপাকে পরেচেন গোড়াই এলাকাবাসি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার দেওহাটা এলাকায় বেঙ্গল এন কে এফ ইন্ডাসট্রিস, কোদালিয়া এলাকায় বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান নাসির গ্রুপ অব ইন্ডাসট্রিজ, সোহাগপুর এলাকায় মন্ডল গ্রুপ, কাশেম ড্রাইসেল ইন্ডাসট্রিজ, টাঙ্গাইল কটন মিলস, হাটুভাঙ্গা এলাকায় সাইথ ইস্ট টেক্্রটাইলস মিলস লি. নাহিদ কটন মিলণস, ইয়ুৎ স্পিনিং স্মিনিং মিলস লি. কমফিট কম্পোজিট নীট লি. উত্তরা স্পিনিং মিলণস লি. উত্তরা সাইকেল মাঠ ইন্ডাসট্রিজ, নিউটেক্্রক্্র গ্রুপ অব ইন্ডাসট্রিজ, সৈয়দপুর এলাকায় মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাসট্রিজ, মৎস হেচারি, শিরিন স্পিনিং মিলস লি. রাজাবাড়ি এলাকায় খান গার্মেন্টস, আর এফ এল প্লাস্টিক ইন্ডাট্রিজ, স্কয়ার ফ্যার্মাসিটিক্যালসহ অর্ধশত মিলকারখানা গড়ে উঠেছে। দুই একটি ছাড়া এসব মিলকারখানার অধিকাংশের নেই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট (বর্জ্য শোধানাগার প্লান্ট)। ফলে কারখানার ময়লা-আবর্জনা আশপাশের খাল, নদী, রাস্তার আশপাশ এবং ডোবা নালায় ফেলায় পরিবেশ এখন মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে বলে গোড়াই শিল্পাঞ্চলেল বসবাসকারী অন্তত ৩০ জন নারী পুরুষ অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের সোহাগপাড়া এলাকায় সোহাগপাড়া-কোদালিয়া-রহিমপুর খাল, সোহাগপাড়া-কলিমাজানি খাল, রাজাবাড়ি-বগাবাড়ি খাল, হাটুভাঙ্গা-সৈয়দপুর খাল, সৈয়দপুর –পালপাড়া খালসহ ৬-৭ টি খালে কারখানার বর্জ্য ফেলায় ভরাট হয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া কারখানার বর্জ্য বংশাই নদীতে ফেলায় মরে পানি কালচে হয়ে যাচ্ছে মাছ।
ময়লা আবর্জনার পচা দুর্ঘন্ধে এরাকায় বসবাস করা দুষ্টর হয়ে উঠছে বলে ভুক্তভোগিদের মধ্যে বাবুল সিকদার, প্রভাষক নুরুল ইসলাম নুরু, ব্যবসায়ী শামীম হোসেনসহ ২০ জন অভিযোগ করেছেন।
তারা অভিযোগ করেন, এলাকার পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিটি শিল্পকারখানায় ময়লা-আবর্জনা শোধানাগারের জন্য (ইটিপি প্লান্ট) চালু করার সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ শিল্পকারখানা সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে দুষিত ময়লা-আবর্জনা নদী ও খাল বিলে ফেলছে। ময়লা-আবর্জনার দুষিত বজ্রে এক দিকে এলাকার পরিবেশ যেমন দুষিত হয়ে পরছে সেই সঙ্গে এলাকার জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পরেছে। এছাড়া দুষিত ময়লা-আবর্জনা খাল-বিল ও নদীর পানিতে মিশে বোয়াল, শৈল, কাতল, মৃগেল, শিং, টেংরা, মাগুর, তেলাপিয়া, সরপুটি, পাপতা, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে বিলুপ্তির পথে।
এ ব্যাপারে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের তিনটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আমাদের কারখানায় বর্জ্য শোনাগারের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু রয়েছে। অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানায় বর্জ্য শোধানাগার গড়ে তোলেনি। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্ময়কারী গৌতম চন্দ বলেন, গোড়াই শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানায় দুষিত ময়লা আবর্জনা শোধনাগার না করেই অপরিকল্পিত ভাবে খাল বিল ও নদীতে ফেলা হচ্ছে। পানি দুষিত হয়ে মাছের যেমন মড়ক দেখা দিয়েছে, সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে এলাকার জীব বৈচিত্রও হুমকির মুখে পরেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনরে সঙ্গে সমন্ময় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট, জলজ প্রাণী ও জীব বৈচিত্র ধ্বংস করার জন্য যারা কারখানার ময়লা-আবর্জনা নদী ও খাল বিলে ফেলে পানি দুষিত করছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) মাসুদুর রহমান বলেন, গোড়াই শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানার বর্জ্য নদী ও খাল বিলে ফেলায় এলাকার পরিবেশ মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে বলে জানতে পেরেছেন। কারখানার মালিকদের কারখানার ময়লা আবর্জনা খাল বিলে ফেলে পানি দুষিত করার কোন সুযোগ তাদের নেই। শিল্প কারখানা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা যাতে যত্রতত্র না ফেলে পানি দুষিত এবং পরিবেশ দুষিত না করা হয় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post