নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের তেকালা গ্রামের কুষ্টিয়াতে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নাজমুল হুদা নিলু ও তিনার লোকজনের হত্যার হুমকীতে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন বেগম রোকেয়া নামের এক নারী।
বেগম রোকেয়া তেকালা গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ইকতিয়ার উদ্দিনের স্ত্রী ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের মৃত ফকির বিশ্বাসের মেয়ে।
জানা যায়, বেশ কিছুদিন যাবত নাজমুল হুদা নিলু ও বেগম রোকেয়ার মধ্যে বসতবাড়ির জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। বেগম রোকেয়ার স্বামী ইকতিয়ার উদ্দিনের অংশের জমি নিলু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজেদের বলে দাবী করার কারণেই এ বিরোধ। শুধু তাই নয় বেগম রোকেয়ার স্বামী প্রবাসে এবং ছেলে আহমেদ সাজিদ ও মেয়ে ইভা আক্তার আঁখী ঢাকাতে অবস্থান করায় একাকীত্ব পেয়ে রোকেয়ার বাড়ির প্রাচীর ভাঙ্গা ও জোরপূর্বক দখলকৃত জমিতে বেড়া দিতেও বাঁধেনি নিলু’র। নিলু ও তার বাবা রহমত আলী অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য হওয়ায় ক্ষমতার দাপটেই নাকি এমন কাজ করছেন।
বিভিন্ন সময়ে রোকেয়াকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজসহ প্রাণনাশ ও খুন করার হুমকী-ধামকীও অব্যাহত রেখেছেন নিলুসহ তিনার লোকজন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুলাই-২০২৪ সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বেগম রোকেয়াকে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে বিবাদী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নাজমুল হুদা নিলু, নিলু’র বাবা রহমত আলী, মাতা নাসিমা খাতুন, চাচা আমিরুল ইসলাম, চাচাতো ভাই আশিকুর রহমান, চাচী আশরাফুন নেছা, মফি’র স্ত্রী বিলকিস ও নাসির পিতা অজ্ঞাত গ্রাম তেকালাদ্বয় পরস্পর যোগসাজসে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাতে দেশীয় তৈরি অস্ত্র নিয়ে বে-আইনি জনতাবদ্ধে তেকালা গ্রামস্থ বেগম রোকেয়ার বসতবাড়ির সামনে উপস্থিত হয় এবং বিবাদীরা রোকেয়াকে একা পেয়ে মারধর ও গালি-গালাজ করে। এক পর্যায়ে বাদ প্রতিবাদ ঘটলে নিলু তার হাতে থাকা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে চাচী রোকেয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ মারতে গেলে আত্মরক্ষার্থে হাত দিয়ে বাঁধা প্রদান করলে বাম হাতের আঙুলের উপর কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় আশিকুর ও আশরাফুন নেছা রোকেয়ার দু’হাত শক্ত করে ধরে রাখলে, নাসিমা খাতুন চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়ার এক পর্যায়ে রোকেয়ার গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। যার মূল্য আনুমানিক এক লক্ষ টাকা অপর দিকে আমিরুল লাঠির বাটাম দিয়ে রোকেয়ার দু’পায়ের দাপনা, হাতে, পায়ে, বুকে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ফোলা, কালশিরা জখম করে।
এঘটনায় রোকেয়ার চিৎকারে প্রতিবেশী সামিরুল শাহ, মোহাম্মদ উজ্জল শাহসহ আরও অনেকে এগিয়ে আসলে বিবাদীরা খুন-জখম করার হুমকী দিয়ে স্থান ত্যাগ করলে স্থানীয়রা রোকেয়াকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
পরে রোকেয়া বেগম আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের সাথে আলাপ করে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। যার মামলা নং-২৬। তারিখ: ১৩/০৭/২০২৪।
এদিকে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় নিলু’র পাঠানো বিভিন্ন লোকজনের আনাগোনা ও প্রাণনাশের নানা হুমকীতে বাড়ি ছেড়ে নিরাপত্তাহীনতায় অন্যত্র অবস্থান করছেন বেগম রোকেয়া।
এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন বেগম রোকেয়াসহ তিনার পরিবারের সদস্যরা।
বিষয়টি নিয়ে আদাবাড়ীয়া ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য সোহেলকে ফোন করা হলে তিনি জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মিমাংসার জন্য ইতিপূর্বে স্থানীয়ভাবে বসা হলে নাজমুল হুদা নিলু মানতে নারাজ হন। পরে রোকেয়াকে একা পেয়ে মারধর করে। যা স্থানীয় তেকালা পুলিশ ক্যাম্প অবগত রয়েছেন।
তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের এসআই উত্তমকে ফোন করা হলে, তিনি জানান, রোকেয়া সম্পর্কে নিলু’র চাচী হন। জমি-জমাকে কেন্দ্র করে নিলু নাকি তার চাচীকে রক্তাক্ত জখম করেছে। পরে শুনেছি বাঁশ দিয়েও পেটানো হয়েছে। এঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রোকেয়া ও নিলু পরস্পরে একই পরিবারের লোক। সামান্য জমি নিয়ে ঝামেলা। ঘটনায় রোকেয়া ও নিলু দু’জনেই রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। এবিষয়ে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৬ জুলাই ২০২৪

Discussion about this post