শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, ফুলবাড়ি থেকে ফিরে: যেন মধ্যযুগীয় বরর্বরতা ফিরছি। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রামটির হিন্দু পাড়ায় কয়েকটি গাছে পোস্টার সেঁটে দিয়ে এক কিশোরীকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাতে বলা হয় সাত দিনের মধ্যে এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে মেয়েকে মুসলমান করা হবে। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে। এখানে ঘোষণা দিয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে ।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ঐ ছাত্রীর বাবা ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নওয়াবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঐ গ্রামে ৩০—৩৫টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে আসছে। এতোদিন তারা শান্তিপুর্ণ বসবাস করে আসছিল। হঠাৎ করে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে হিন্দু পাড়ায় কয়েকটি গাছে পোস্টার সেঁটে দেয় দুর্বৃত্তরা। তাতে বলা হয় সাত দিনের মধ্যে এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। মেয়েকে মুসলমান করা হবে। এ ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রামের একজন বাসিন্দা রঞ্জিত চন্দ্র ফুলবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনুমা তারান্নুমের নির্দেশে গাছ থেকে পোস্টারগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু দৃশ্যমান কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার প্রমান মিলে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়। ঐ গ্রামের একটি হিন্দু কিশোরী ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে অপহৃত হয়। একই গ্রামের গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ী আলিনুর রহমান (৩২) ও তার সহযোগী দূবৃত্তর্রা ঐ কিশোরীকে প্রকাশ্য অপহরণ করে।
অপহরণের শিকার মেয়েটির বাবা জানান, মেয়েটা পড়াশোনায় খুব মনোযোগি ছিল। মেধাবী হওয়ায় পরিবারের ইচ্ছে ছিল মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করব। সে আশায় গুড়েবালি হয়ে গেল। কোচিং সেন্টার হতে বাড়ি ফেরার পথে আলিনুর গংরা মেয়ে কে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছি। গাছে চিঠি দিয়ে হুকির বিষয়টি দ্রুত প্রশাসন আমলে নিলে এমনটি হয়তো হতো না। গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত চন্দ্র জানান, ৪ সেপ্টেম্বর থানায় জিডি করেছিলাম। পুলিশ আন্তরিকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখলে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে পারত। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলে মেয়েটা অপহৃত হতো না। গ্রামের একটা মেয়ে অপহরণ হওয়ায় অন্যান্য অভিভাবকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি নওয়াবুর রহমান জানান, পুলিশ জিডিটি তদন্ত করেছিল । হিন্দু গ্রামের দিকে নজর রেখেছিল। অপহৃত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। অপহৃত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

Discussion about this post