মিরপুর কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বানসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রহমত আলী রব্বানের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর অস্ত্রোপচার শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকাতে রেফার্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর-২০২৪) বেলা দুইটার দিকে উপজেলার ঈগল চত্বরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বানের অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মিরপুর পৌর ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম সারের ব্যবসা করেন। গত সোমবার সকালে একটি ট্রাকে থাকা সারের বৈধ চালান দেখতে যান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বান। চালানের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারার অভিযোগ তুলে ট্রাক আটকে রেখে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে খবর দেন। পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হকের সমর্থক ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খন্দকার টিপু সুলতানসহ তাঁর লোকজন আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থে জোর করে ওই আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে সার নামিয়ে দেন।
এতে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা শুরু হয়। এরপরই রহমতের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ওই সার ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা টিপু সুলতানের লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেন।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা রহমত আলী রব্বান।
এরপর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সামনে রহমতের ভাই জাহেদ আলীর সঙ্গে সার ব্যবসায়ীর ছেলে আসিফের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এ সময় ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি টিপু সুলতানসহ অন্যরা আসিফের পক্ষ নিয়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও রহমত আলীর ছোট ভাই ইব্রাহিম আলীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। বিষয়টি জানতে পেরে রহমত আলী রব্বানের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
এতে রব্বানের ছোট ভাই জাহিদ আহত হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর টিপু সুলতান ও তার ছেলে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাতের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা করেন। এতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে রহমত আলী, তাঁর ভগ্নিপতি সালাম, টিপু সুলতানের পক্ষের আতাউল হক চঞ্চল সহ অন্তত ১০ জন আহত হন। তাঁদের মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
রহমত আলীর ভাগনে আল সাইফ বলেন, আবদুল হক ও টিপু সুলতান তাঁর মামাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে নানা পরিকল্পনা করছেন। রহমতের জনপ্রিয়তা দেখে তাঁদের ঈর্ষা হয়। এ জন্য হামলা চালিয়ে আহত করেছেন। তাঁর বাবাও আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন টিপু সুলতানের পক্ষের কর্মী আতাউল হক বলেন, তাঁর মাথায় আটটি সেলাই পড়েছে। তিনিসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মারফত আফ্রিদী বলেন, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খন্দকার টিপু সুলতানের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী, তাঁর দুই ভাই ও ভগ্নিপতি আহত হন। রহমত আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ইকবাল হোসেন বলেন, রহমত আলীর হাত, মাথা, কান ও পিঠে কয়েকটি স্থানে কেটে গেছে। তাঁর এক হাত ভেঙে গেছে। অন্য হাতের অবস্থা মারাত্মক।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হকের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কুষ্টিয়ার বাইরে আছেন জানিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদ্য বাতিল হওয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত। তাদের আচরণ অসহিষ্ণু। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
টি//দৈনিক দেশতথ্য//২৫ সেপ্টম্বর,২০২৪//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post