মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
একুশে পদকপ্রাপ্ত, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক (৮৯) মারা গেছেন (ইন্না নিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন)।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সারে নয়টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারনে টাঙ্গাইল শহরের নিজ বাসায় তিনি মারা যান।
তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার ০৭ নং ওয়ার্শি ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে।
বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদের প্রয়ানে তার নিজ জন্মস্থান মির্জাপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর, পৌরসভার সাবেক মেয়র বীল মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. মোশারফ হোসেন মনি জানান, ফজলুর রহমান খান ফারুক ১৯৪৪ সালের ১২ অক্টোবর ০৭ নং ওয়ার্শি ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম আব্দুল হালিম খান এবং স্ত্রীর নাম সুরাইয়া বেগম। তিনি মির্জাপুরের কহেলা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণীর পাসের পর টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৩ সালে সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে আই. কম, ১৯৬৫ সালে জগন্মাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। ১৯৬৭-১৯৭৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন। ১৯৬০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে তৎকালিন পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন ফজলুর রহমান খান ফারুক। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের সাটিয়াচড়ায় সম্মুখ যুদ্ধে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টরের সর্বাধিনায়ক। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে টাঙ্গাইল-০৭ (মির্জাপুর) আসনের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে টাঙ্গাইল জেলা বাকশাল এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিতনি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ২০১৭ থেকে অদ্যবর্তি পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক পান। তিনি মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ওয়ার্শি উচ্চ বিদ্যালয়, মির্জাপুর প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। টাঙ্গাইলের রাজনীতি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াঙ্গনেও ছিল তার অগ্রণী ভুমিকা। একাধারে তিনি রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
মহান এই ব্যক্তির মৃত্যুতে টাঙ্গাইলসহ মির্জাপুরবাসি শোকাহত। বাদ আসর টাঙ্গাইল গোরস্থান জামিয়া ইসলামিয়া দারুস-সুন্নাহ মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঐ মাদ্রাসার গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
তার একমাত্র পুত্র খান আহমেদ শুভ টাঙ্গাইল-০৭ (মির্জাপুর) আসনের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য।
ফজলুর রহমান খান ফারুকের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল বিডি লিমিটেড এর শিক্ষা পরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল প্রতিভা মুৎসুদ্দি, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুর রহমান সহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলকসহ সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ গবীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

Discussion about this post