মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই ইউনিয়নের দক্ষিণ সোহাগপাড়া গ্রামে ২০১৪ সালে আগুনে পুড়িয়ে মা ও তিন কন্যাসহ চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডারের বিচার কাজ ১০ বছরেও হয়নি।
মা হাসনা বেগম (৩৮), তার তিন কন্যা মনিরা আক্তার (১৫), মীম আক্তার (১২) ও মলি (৩) কে নিজ বাড়ির ঘরের ভিতরে পুড়িয়ে পৈশাষিক ভাবে হত্যার পরও বাদীকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ন্যায় বিচার চেয়ে দ্ধারে দ্ধারে ঘুরছেন মামলার বাদী মো. মোফাজ্জল হোসেন। আসামীরা জামিনে এসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) মালার বাদী মোফাজ্জল হোসেন ও তার পিতা আলাল উদ্দিন এই প্রতিনিধির কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
মির্জাপুর থানার মামলা সুত্র ও মালার বাদী মোফাজ্জল হোসেন ও তার পিতা আলাল উদ্দিন জানান, দক্ষিণ সোহাগপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের সঙ্গে হাসনা বেগমের বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে মজিবুর রহমান মালেশিয়া প্রভাসি ছিলেন। তিন কন্যা মনিরা আক্তার (১৫), মীম আক্তার (১২) ও মলি (৩) নিয়ে বাড়িতে থাকতেন হাসনা বেগম। হাসনা বেগমের বড় মেয়ে গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
স্কুলে আসা যাওয়ার পথে সোহাগপাড়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের পুত্র বখাটে জাহাঙ্গীর আলম মনিরাকে উত্যক্তসহ উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দিতো। নিরাপত্দতার অবাবে মনিরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।মনিরা এই কথা বাড়িতে তার মা হাসনা বেগম এবং বাবা মজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের জানালে ক্ষিপ্ত হয় বখাটে জাহাঙ্গীর।
বখাটে জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগিরা ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ও মনিরার পরিবারকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর গভীর রাতে দক্ষিণ সোহাগপাড়া গ্রামে মনিরাদের বাড়িতে একতলা পাকা ঘরের দরজা ও জানালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে বাহিরের দরজায় তালা ঝুরিয়ে দেয়। রাতের অন্ধকারে আগুনে পুড়ে মারা যায় হাসনা বেগম (৩৮), তার তিন কন্যা মনিরা আক্তার (১৫), মীম আক্তার (১২) ও মলি (৩)। এই ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চলেল্যর সৃষ্টি হয়। পৈশাষিক এই ঘটনা দেখতে সাবেক এমপি, তৎকালিন পুলিশের আইজিপি, ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার ও ডিসিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন এসেছিলেন।
তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ^াসও দিয়েছিলেন। মনিরার বাবা দেশে না থাকায় বোন তিন ভাগনীর হত্যাকারীদের নামে ঘটনার মুলহোতা জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান আসামী করে তার মামা মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা ০২, ধারা ৪৩৬/৩০২/৪২৭/৩৪ দ. বি.। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় আবুল কাশেম, আবুল কালাম, বাহার উদ্দিন, বদর উদ্দিন, খোরশেদ, নুর মোহাম্মদ নিপু, মোগর আলী, খবির উদ্দিন এবং শাহআলমসহ সন্দেহ ভাজন ১৪-১৫ জনকে আসামী করা হয়। মির্জাপুর থানার তৎকালিন পুলিশ অফিসার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দত্ত ২০১৫ সালে আবুল কালাম, বাহার উদ্দিন, বদর উদ্দিন, খোরশেদ, নুর মোহাম্মদ নিপু, মোগর আলী, খবির উদ্দিন এবং শাহআলমসহ করে আসামীদের নাম বাদ দিয়ে মামলাটি টাঙ্গাইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরন করেন। মামলার বাদী মোফাজ্জল হোসেন এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে আসামীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুনরায় আদালতে আবেদন করেন। সেই আবেদন এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে মামলাটি আদালতে যাওয়ার পর আসামীরা একে একে জামিনে চলে আসে। এখন জেল হাজতে রয়েছে প্রধান আসামী বখাটে জাহাঙ্গীর আলম। বাকী আসামীরা জামিনে এসেই বাদী ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়াসহ প্রাণ নামের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ফরে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদী।
এ ব্যাপারে বাদী মোফাজ্জল হোসেন ও তার পিতা আলাল উদ্দিন বলেন, ১০ বছর ধরে মামলা চালাতে গিয়ে আমরা এখন সর্বশান্ত হয়ে পরেছি। একের পর এক তারিখ পরছে এবং স্বাক্ষী নিয়ে আদালতে ঘুরছি। কিন্ত কোন রায় হচ্ছে না। চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলার কোন অগ্রগতি ও বিচার না পাওয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জামিনে আসা আসামীদের গ্রেফতার এবং মামলার রায় প্রদানের জন্য অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস, আইন ও বিচার বিভাগীয় মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, পুলিশের আইজিপ মইনুল ইসলামসহ পুলিশের উদ্ধর্ততন কর্মকর্তা এবং বিচারকের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, আমি অল্প কিছু দিন হলো এই থানায় যোগদান করেছি। মামলাটি দীর্ঘ দিনের এবং আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এখন থানা পুলিশের কোন এখতিয়ার নেই এই মামলা সম্পর্কে কিছু বলার।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবি ও চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলার পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পিপি মো. মনিরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলাটি বর্তমানে এডিশনাল জজ কোর্টের বিচারক মহোদয়ের কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাটি শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এহ/23/10/24/ দেশ তথ্য
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post