মিরপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবমার্সিবল পাম্পের একটি ইলেক্ট্রিক মোটর চুরির ঘটনায় বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি ঘটনার কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টিকে কেন্দ্র ক্ষুদ্ধ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয়দের মধ্যে। তারা বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র-শিক্ষক, স্থানীয় জনতা ও থানা পুলিশের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী।
মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হকের ঘনিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে, গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যালয়ের ওয়াশরুম থেকে সাবমার্সিবল পাম্পের বৈদ্যুতিক মোটর চুরি হয়ে যায়।
তিনি বিষয়টি মিরপুর থানা পুলিশ এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছেন। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও ছাত্র-শিক্ষক, বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় বাজারের লোকজন বলছেন ভিন্ন কথা।
তাদের দাবি প্রধান শিক্ষক একরামুল হকের অদূরদর্শিতা ও নৈশ প্রহরী নুরুজ্জামান পলাশের কর্তব্যে অবহেলার কারণে এই চুরি সংঘটিত হয়েছে। ঘটনার বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও কোনো এক অজানা কারনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নৈশ প্রহরী নুরুজ্জামান পলাশকে এখন পর্যন্ত কোনোরূপ মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ বা কৈফিয়ত তলব করেনি।
এদিকে প্রধান শিক্ষক একরামুল হক নিজের দায় এড়াতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি দায়সারাভাবে উপস্থাপন করেছেন।
একইভাবে মিরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এঘটনার পরে প্রধান শিক্ষক একরামুল হক ৫ আগস্ট পলাতক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুল হান্নানকে জানান। এসময় আবদুল হান্নান বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবি করিমন নেসাকে চুরির ঘটনা অবগত করে প্রশাসননিক ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন বলে বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক জানিয়েছেন।
স্থানীয় মাজিহাট পুলিশ ক্যাম্পের সূত্রে জানা গেছে- নৈশ প্রহরী তার দায়িত্বে অবহেলা করেছে, সে কখনো রাত্রি কালিন পাহারায় আসেনি। চুরির বিষয়টি নিয়ে নৈশ প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন। কিন্তু এই নৈশ প্রহরী কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই হবার সুবাধে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি হোম নেগোসিয়েট করে ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন।
কে এই নৈশ প্রহরী: কুর্শা ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হান্নান ১১ নভেম্বর ২০২১ সালের কথিত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বনে যান। এসময় তিনি তড়িঘড়ি করে একটি গোপন সার্কুলারে মাধ্যমে নুরুজ্জামান পলাশকে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা বিনিময়ে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ প্রদান করেন বলে একটি বিশ্বস্থ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নৈশ প্রহরী নুরুজাজামান পলাশ মাজিহাট গ্রামের মৃত দাউদ আলীর ছেলে, বঙ্গবন্ধু আদর্শ ঐক্য পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ও তৎকালিন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল হান্নানের চাচাতো ভাই। নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকে অদ্যাবধি এই নৈশ প্রহরী কখনো রাত্রিকালিন ডিউটি পালন করেন না বলে স্থানীয় বাজারের লোকজন ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক জানিয়েছে।
চুরির বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা-পুলিশ ও নৈশ প্রহরীকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা তিনি এখন পর্যন্ত ঘটনা তদন্তে কমিটি ঘটন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ না করে বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতির সাথে যোগাসাজস রক্ষা করে চলেছেন। তার এই আচরনে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও ছাত্র শিক্ষক বৃন্দ। ঘটনাটি সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি এলাকাবাসীর।
এহ/13/11/24/ দেশ তথ্য
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post