শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পুত্র রাকিবুজ্জামান আহম্মেদের গড়ে তোলা অবৈধ রঙ্গশালা (হাওয়াখানা) রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গুড়িয়ে দিয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১০ টায় পূর্ব নিধারিত অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কতৃপক্ষ।
এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বদেয় রেলওয়ে ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এসময় পুলিশ, রেলপুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তা গণ উপস্থিত ছিলেন।
জানান গেছে, ২০১৪ সালের পর সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও সাবেক এমপি নুরুজ্জামান আহম্মেদের পুত্র রাকিবুজ্জামান আহম্মেদ বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে থাকা কয়েক একর জমি অবৈধভাবে দখলে নেয়। সেখানে তার ব্যক্তিগত রঙ্গশালা বা হাওয়াখানা গড়ে তুলে। এই হাওয়াখানায় প্রতিরাতে নিয়মিত মাদকের আড্ডাবসত। কেনা বেচা চলত লাখ লাখ টাকার মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল। মন্ত্রীপুত্র নিজেও ফেন্সিডিল আসক্ত বলে তরুণদের কাছে পরিচিত। ফেন্সিডিল আসক্তদের সাথে ছিল তার সখ্যতা। মন্ত্রীপুত্র রাকির আহম্মেদ সেখানে রেলওয়ে জমিতে একটি বিশাল গোডাউন গড়ে তুলেন, গড়ে তুলেন পার্ক ও রঙ্গশালা, অবৈধ জমি বৈধ করতে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করতে পাশে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও সে কান একটি মসজিদ নির্মান করেন। নির্মাণ করেন লোক দেখানো আওয়ামীলীগ পার্টি অফিস। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মসজিদটি বাদে সকল অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পিআইও কর্মকতা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে ২০১৪ সাল হতে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পূর্ব পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। একই অবৈধ স্থাপনা নির্মানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ, এমপির বরাদ্দ ও উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দ নিয়ে করা হয়েছে। যার বরাদ্দের পরিমান প্রায় দুই শত কোটি টাকা। ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের কারণে সীমান্ত হতে যানবাহন আসতে না পারায় মন্ত্রীরপুত্রের মাদক ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়ে। এসময় সে তার মাদক ব্যবসার রুট পরিবর্তন করে। তার বাবার এপিএস মিজানুর রহমান মিজান ছিল মন্ত্রীপুত্রের মাদক ও অবৈধ ব্যবসার সহযোগী। বিষয়টি মুখে মুখে প্রচার ছিল। বিষয়টি নিয়ে ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করলে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই লালমনিরহাট শহরের পিনকির মোড় হতে মন্ত্রীপুত্রের সহযোগী এপিএস মিজানের স্ত্রীর ব্যবহৃত প্রাইভেটকার হতে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ নানা মাদক উদ্ধার হয়। পুলিশ গাড়ি চালককে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। কিন্ত রহস্যজনক কারণে পুলিশ আটক প্রাইভেটে কারের মালিককে আসামি করেনি।
এ ব্যাপারে সেই সময়ের কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল মিডিয়াকে জানিয়ে ছিলেন উপরের চাপে তদন্ত সঠিক পথে এগুয়নি। তার মানে মন্ত্রীর তদবিরে মাদক পাচারের কেসটি সঠিক তদন্ত হয়নি। সচেতন মানুষের দাবি উঠেছে কালীগঞ্জ ও আদিতমারী থানায় মাদক নির্মূলে পুনরায় মন্ত্রীপুত্র রাকিব ও মন্ত্রীর এপিএস মিজানের মাদক ব্যবসার বিষয় গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। তাহলে মাদক ব্যবসায় রাঘব বোয়ালদের সম্পৃক্ততা বেড়িয়ে আসবে।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post