নিজস্ব প্রতিবেদক
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারী বনাঞ্চলের আশপাশে অবৈধ কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরর চুল্লিতে ম্যাজিষ্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) সারাশি অভিযান চালিয়েছেন।
রবিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন মির্জাপুর উপজেরা সহকারী কমিশণার ভুমি ও নির্বাহূী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান।
অভিযানে মির্জাপুর সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর অভিযোগে ব্যবসায়ী রাসেল মিয়াকে ৩৫ হাজার টাকা এবং মজিবর রহমনাকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলা বনবিভাগ সুত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৮০০শ হেক্টর সরকারী বন ভুমি রয়েছে। বিশাল এই বন ভুমিতে গজারি, গর্জন, সেগুন, আকাশমনি, পিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান গাছ রয়েছে। এছাড়া সমাজিক বনায়ন কর্মসুচীর আওতায় বনাঞ্চল ও এর আশাপাশে প্রচুর বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, বনাঞ্চলের আশপাশের ১০ কি. মি. এর মধ্যে ইটভাটা, করাত কল এবং কয়লা তৈরীর চুল্লি স্থাপন নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। স্থানীয় কিছু অসাধু চক্রের যোগসাজসে সিন্ডিকেট করেই চলছে কাঠ পুড়িয়ে চুল্লিতে কয়লা তৈরীর অবৈধ ব্যবসা। চুল্লির কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে পরেছে। চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের গায়রাবেতিল, তালতলা, মুচির পুকুরপাড়, নয়াপাড়া, পেকুয়া, মুচিরচালা, বাঁশতৈল, বংশীনগর, বালিয়াজান, আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, খুইদারচালা, ঘাগড়াই কুড়াতলী ও খাটিয়ার হাট, তরফপুর ইউনিয়নের টাকিয়া কদমা, পাথরঘাটা ও লতিফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বনের আশপাশে অবৈধ ভাবে কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরী করে আসছে। শতাধিক কয়লার চুল্লিতে প্রতি দিন ৫-৬ টন কয়লা তৈরী হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। কয়লার তৈরীর ফলে বিষাক্ত কাল ধোয়ায় ঐ সব এলাকায় বসবাস করা হুমকির মুখে । এতে করে বনজ সম্পদ ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং আশপাশের গ্রামের গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট হয়ে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পরেছে।
এদিকে আজ রবিবার আজগানা ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সেনাবানিী, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন অভিযান চালায়। এ সময় বিপুল পরিমান কাঠ জব্দ করা হয়। এছাড়া গুড়িয়ে দেওয়া হয় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর চুল্লি। অভিযানের খবর পেয়ে অনেকেই পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান বলেন, বনাঞ্চলের ভিতরে ও আশপাশে অবৈধ ভাবে কয়লার চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কোন সুযোগ নেই। মোবাইল টিমের মাধ্যমে কয়লা তৈরির অবৈধ চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুইজনকে ৭০ হাজার টাকা জরিমনা করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের অভিযান চলমান থাকবে এবং কোন অবস্থায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Discussion about this post