পাটগ্রাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের পাটগ্রামে হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছে ।
তিনি বিদ্যালয়ের গণিত শ্রেণিপাঠের শিক্ষক। ২০০২ সাল থেকে কর্মরত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে ২৫ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত একাধিক ছাত্রীর অভিভাবকগন।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়ি পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে , শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কর্মরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সাথে প্রায়ই অশ্লীল কথা-বার্তা বলে উক্ত্যাক্ত করেন। টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার কথা বলে ভয় দেখিয়ে একাধিক ছাত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক ছাত্রী সামাজিকভাবে মান-সম্মানের ভয়ে এতদিন মুখ খোলেননি। সম্প্রতি দুইজন ছাত্রীর সাথে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন শিক্ষক। পরে ভুক্তভোগি ছাত্রীদের বান্ধবীদের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়। একপর্যায়ে অনেকের অভিভাবক ও ঘটনা জানতে পারে। এ নিয়ে ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সোমবার দুপুরে ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা একটি লিখিত অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বরাবরে দেন। পরে বিদ্যালয় থেকে শতাধিক ছাত্রী একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি ও বিদ্যালয় থেকে অপসারণের দাবি জানান ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে এখন থেকে বিদ্যালয়ে শ্রেণিপাঠ প্রদানে নিষেধ করে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে ছাত্রীরা ফিরে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করেন, ‘শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খান একজন লম্পট, চরিত্রহীন ব্যক্তি। তিনি প্রায়ই ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল ও খারাপ কথা বলেন ও শরীরে হাত দেন।’ একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা ছাত্রীদের সাথে ওই শিক্ষকের শ্লীলতাহানীর ঘটনা দীর্ঘদিন থেকে জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। যার স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তাঁরা এ ধরণের ষড়যন্ত্র করে হেয় করার চেষ্টা করছে। শিক্ষক ও অভিভাবক ষড়যন্ত্র করতে পারে।’
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষক নাজিমুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনা কয়েকদিন আগে জানতে পেয়ে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পাটগ্রাম হুজুর উদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীরা আমার কাছে এসেছে। ঘটনা জানতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে। যদি ঘটনা প্রমাণ হয় তাহলে আইন মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post