ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা ॥ কুষ্টিয়ায় নেই অধিকাংশ ইটভাটার অনুমোদন, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবু বেড়েই চলেছে ইটভাটা। সরকারি নির্দেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বন কে উজার করে হাজার হাজার টন কাঠ মওজুদ করে চলেছে বেশীর ভাগ ইটভাটা। প্রতি মৌসুমে পুড়ছে লক্ষ লক্ষ মে.টন কাঠ। কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলার গড়ে ওঠা তালিকাভুক্ত ১৫১ টিসহ প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটার মালিকদের কেউই নিয়ম মেনে ভাটা স্থাপন করেননি। কুষ্টিয়ায় ইটভাটায় আইন ভেঙে বছরে ৭৬ লক্ষ কোটি ৩৪ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, সামাজিক বন বিভাগ ও ইটভাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৫ ও ৬ ধারা অনুযায়ী ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো দন্ডনীয় অপরাধ। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয় বছরের মাঝামাঝিতে একটি জরিপ চালিয়েছিল। ওই জরিপ মোতাবেক, প্রতি মৌসুমে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) একটি ভাটায় তিন শ্রেণির গড়ে ২৫ লাখ ইট তৈরি হয়।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা ১৫টির বেশি ইটভাটায় সরেজমিনে দেখা গেছে। যার মধ্যে মেসার্স এএমবি ব্রিক্স ১ ও ২ মসলেমপুর, মেসার্স আলী ব্রিক্স কলেজ রোড, মেসার্স এএইচএম ব্রিক্স মধ্যবাজার, মেসার্স এমএমবি ব্রিক্স চরদামুকিয়া, মেসার্স মানিক ব্রিক্স দশমাইল, মেসার্স কেবিএস বিক্স কোদালিয়াপাড়া, মেসার্স কেএন্ডবি ব্রিক্স ১ ও ২ ক্ষিমিরদিপাড়া, এমএরআই ব্রিক্স চরবামন্দী, মেসার্স এমএইচকে ব্রিক্স চন্ডিপুর, মেসার্স এমবিএফ ব্রিক্স পারাকপুর, মেসার্স এমএএইচ ব্রিক্স, ভেড়ামারা। এছাড়াও আসে পাশে বেশ কয়েকটি ভাটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সবগুলোতেই ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হবে এবার। ভাটায় স্তুপ করে রাখা হচ্ছে কাঠ। ভাটার পাশে স্থাপিত করাতকলে সেগুলো চেরাই করে নেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন ভাটামালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একটি ভাটায় দৈনিক ৩৫০-৪০০ মণ জ্বালানি কাঠ প্রয়োজন হয়। ৩৫০ মণ ধরলেও এক মৌসুমে (১৮০ দিন) ৬৩ হাজার মণ কাঠ পুড়ছে। সে হিসাবে কুষ্টিয়া ভাটায় বছওে ৭৬ লক্ষ ৩৪ হাজার মণ কাঠ পুড়ছে। এসব কাঠ আসছে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের পাশাপাশি পাশের ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও মাগুরা থেকে। অবৈধ চিমনি: কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় ৮৪টি ফিক্সড ও ৩৫টি ড্রাম-চিমনির। ড্রাম-চিমনির ভাটায় ইট পোড়ানো একবারেই অবৈধ। আর ফিক্সড-চিমনির ভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এই বিষয়ে চুয়াডাঙ্গায় খুলনা বিভাগীয় ইট ভাটা মালিক সমিতির এক সমিতির সভায় ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিঠু বলেছেন, কুষ্টিয়া কোন ভাবেই খড়ি নিয়ে ভাটা চালানো যাবেনা। তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি দৌলতপুরের বেশিরভাগ ইটভাটাতে হাজার হাজার মন খড়ি সংগ্রহ করেছেন। এই খড়ি গিয়ে যাতে কোন ভাবেই ইট পোড়াতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়াও যারা ভাটাতে খড়ি পোরানোর কথা চিন্তা করছেন তাদের হুশিয়ারী করেছেন তিনি। ঐ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে কাজী নাজির আহমেদ মুন্নু বলেন, দেশের অবকাঠানো উন্নয়নের সব থেকে অংশিদার ইটভাটা, এই শিল্পটি ধ্বংসের পথে অবস্থান করছে, এই শিল্পটি বাঁচানোর জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। ইতি মধ্যে বিষয়টি খুলনা বিভাগীয় ইটভাটা মালিক সমিতির দৃষ্টিগোচড় হওয়ায় খড়ি সংগ্রহ বন্ধের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্শন করেছিলেন তারা। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, জেলার বেশিরভাগ ইট ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। চিমনির উচ্চতাও সঠিক নেই। অবৈধ এসব ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা হয়েছে। যথা সময়ে তা কার্যকর করবেন বলে জানান তিনি।

Discussion about this post