শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা): খুলনার পাইকগাছায় চলতি মৌসুমে আমন ধান সংগ্রহের নির্দিষ্ট সমযের প্রায় আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ১ হাজার ৫৩ মেট্রিক টনের এক ছটাক ধানও ক্রয় করতে পারেনি খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় হাট-বাজারে দাম চড়া থাকাকে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
কৃষক আবদুর রশীদ জানান, চলতি বছর আমন ধান কাটার সাথে সাথে আধা শুকুনা ধান প্রতি মণ ১ হাজার ৫৫০ টাক দরে বিক্রি করেছেন। পক্ষান্তরে সরকার প্রতি মণ ধানের ক্রয় মূল্য নির্দ্ধারণ করেছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। এছাড়া সরকারকে ধান বিক্রি করতে শুকিয়ে দিতে হয়। সাথে গাড়ি ভাড়াও গুণতে হয় কৃষকের পকেট থেকে। এরপরও কার্ড ধারীদের বাইরে কৃষকরা ইচ্ছা করলেও সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেননা।
উপজেলার দেলুটীর কৃষক আবুল হোসেন ইসলাম বলছিলেন, স্থানীয় ফুলবাড়ী বাজারে ভেজা ধান বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। এ কারণে সরকারকে ধান দেননি তিনি। এরপরও সরকারকে শুকনো ধান দিতে মণ প্রতি ৫ কেজি ধানের ঘাটতির পাশাপাশি টাকা পেতেও ভোগান্তি থেকে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষকরা জানান, ইতোপূর্বে বাজারমূল্যের চেয়ে সরকার নির্দ্ধারিত মূল্য বেশি থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছে বাড়তি টাকা দাবি করায় সরকারি গুদামে ধান দিতে নিরুৎসাহিত হন তারা।
উপজেলার তৃণমূলের কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে প্রতিমণ ধানের ক্রয়মূল্য ১ হাজার ৩২০ টাকা নির্দ্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও বাড়ি থেকে ওই ধান খাদ্যগুদামে নিতে ৪০০-৫০০ টাকা গাড়ি ভাড়া ভাড়া লেগে যায়। পক্ষান্তরে চাদিার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনায় ব্যাবসায়ীদের অনেকে কৃষকের বাড়িসহ ক্ষেতে গিয়ে ধান খরিদ করেন। সেখানে পরিবহনসহ কৃষকের কোনো বাড়তি খরচ না থাকায় খাদ্যগুদামের চেয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রিতে সাচ্ছ্যন্দবোধ করেন তারা। তারা বলছিলেন, কৃষি কার্ড নিয়ে অনলাইনে আবেদন, ব্যাংক চেকের মাধ্যমে দাম পরিশোধ, আর্দ্রতা পরিমাপ, পরিবহণ খরচসহ নানাবিধ বাড়তি ঝামেলায় কৃষককূল সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে রীতিমত নিরুৎসাহিত হন। এক্ষেত্রে তাদের দাবি ও পরামর্শ কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ধানের দাম আরও বাড়াতে হবে। অন্যথায় ধান ক্রয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলেও মনে করেন কৃষকের পাশাপাশি সরকারি কমর্সকর্তারাও।
পাইকগাছা উপজেলা খাদ্য গুদাম সূত্র জানায়, প্রতি বছর অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সরকারি ভাবে ধান বিক্রয়য়ের আবেদন করেন কৃষকরা। তবে এবছর উপজেলার সকল কৃষকের জন্য ধান বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তার পরও গত প্রায় আড়াই মাসে আমন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৫৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সামনে আরো এক মাস বাকি থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন প্রকার চাল সংগ্রহ নিয়ে রীতিমত নানা আশংকা জেঁকে বসেছে। যদিও গত বছর একই পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রার এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি।
উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজারে এখন ঊর্ধ্বগতি। এমন অবস্থায় ধানের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করেন কৃষকদের অনেকে। তাই খোলাবজার কিংবা সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে তাদের অনেকে ঘরে মজুত করছেন।
পাইকগাছা উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার হাটবাজারে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি থাকায় ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বাজারদর অব্যাহত থাকলে খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সংগ্রহ অভিযান শুরুর প্রায় আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও তাই এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম জানান, এবার উপজেলায় ১৭৪২৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হলেও অতিবৃষ্টির জন্য অনেক জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। তার পরেও হেক্টর প্রতি গড় ৪.৫ মে. টন ধান উৎপাদন হয়েছে। তারপরও ধারণা করা হচ্ছে সরকার নির্দ্ধারিত দামের থেকে স্থানীয় খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কার্যত কৃষকদের কেউ সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করছেনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ধান সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি মাহেরা নাজনীন বলছিলেন, উপজেলায় এবার ১৫হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। অতি বৃষ্টির দরুণ কোন কোন এলাকায় উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও ফলন ভালো হয়েছে। তারপরও আমন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কোন ধান সংগ্রহ না হওয়ার জন্য খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি থাকাকে দায়ী করেন তিনি।
Discussion about this post