বিশেষ প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেপরোয়া কালোবাজারি মহাজন আব্দুল জব্বার। অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্যের অবৈধ চালানে দুই যুগেরও বেশি সময় সক্রিয় তিনি। কিন্তু, থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে মুন্সিগঞ্জ গ্রামের খোয়াজ আলীর ছেলে আব্দুল জব্বারের নিয়ন্ত্রণে অন্তত পঞ্চাশ মাদক-অস্ত্রের আড়ৎদার। ভারতীয় এমন কোনো পণ্য নেই, যা অবৈধ পথে আমদানির সক্ষমতা রাখেন না জব্বার মহাজন। মুঠোফোনে নিয়ন্ত্রণ এপার-ওপার দুই বাংলায়। ব্যবহার করেন দু’দেশেরই মোবাইল ফোন সিমকার্ড, সচল থাকে দু’দেশের নম্বর ও লেনদেন চ্যানেল। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে ক্ষমতাসীন সিন্ডিকেটের সাথে গভীর যোগসাজশ এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে দিনকে দিন নিজের কালোবাজারি সিন্ডিকেট বড় করেছেন জব্বার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পলায়নের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কিছুদিন আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রহরা বিঘ্নিত হওয়ার সুযোগে অবৈধ ব্যবসার পরিসর আরও বাড়িয়েছেন আব্দুল জব্বার। এমন সব অভিযোগ তার নিজ এলাকাবাসীর।
কালোবাজারি ব্যবসায় সুবিধা করতে জব্বার বিয়ে করেন ভারতের জলঙ্গীর এক পরিবারে। স্ত্রী বেণু বেগমের বড়ভাই ওপার বাংলার নামকরা অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ী বাবুলের সহযোগিতায় দুই বাংলায় তাদের ব্যবসা হয় আরও জোরালো। অনুসন্ধানে জানা গেছে অবৈধ পথে আয়ের টাকা থেকে ম্যানেজ করে চলতে থাকেন এলাকার রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যাক্তি ও পুলিশ-প্রশাসনকে। এরইমধ্যে দুই বাংলায় নামে-বেনামে কিনেছেন অন্তত চল্লিশ কোটি টাকার সম্পদ, যার অধিকাংশই ভারতে। গত তিন মাসেও নতুন সম্পদের মালিক হয়েছেন অন্তত দেড় কোটি টাকার।
নিম্নবিত্ত কৃষকের ছেলে জব্বার লেখাপড়ায় পার করেননি মাধ্যমিকের গন্ডি। দৃশ্যমান এক নিতান্ত বেকার যুবক অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। প্রতিনিয়ত মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসায় উৎসাহ- উদ্দীপনা এবং অর্থ সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন দৌলতপুরের ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জনপদে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন প্রাগপুরের এক সাবেক শীর্ষ ছাত্রদল নেতা মন্তব্য করেন, আমাদের জানামতে দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদকের যে আগ্রাসন তার অর্ধেকই জব্বারের নিয়ন্ত্রণে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে প্রতিনিয়ত লাখ-লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের পাশাপাশি সে পরিচালনা করে আসছে দুই বাংলায় অস্ত্র-মাদকের বিশাল সিন্ডিকেট। সম্প্রতি আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং এলাকায় নানা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে তার অবৈধ ব্যবসার সমালোচনা করতে গেলে।
জব্বারের প্রহসনে নির্যাতিত জামালপুরের আরেক কৃষক জানান, জব্বার সীমান্তের ওপারে মাদক ও অস্ত্র মজুদ করেছে। তার (জব্বারের) আত্মীয় ও ব্যবসায়ীক অংশীদারদের মাধ্যমে। মজুদ থাকা মালামাল প্রতিদিন অল্প-অল্প করে পার করছে বাংলাদেশে। এসব মাদক ও অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে এই কৃষকও পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্রগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী সহ বিভিন্ন এলাকায় জব্বারের নিয়মিত অসঙ্গতিপূর্ণ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশী বিকাশ,নগদ, রকেট, উপায় এবং ভারতীয় জনবলে -এসব লেনদেন চালায় অভিযুক্ত আব্দুল জব্বার।
অনুসন্ধানের প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হয় ভারতের জলঙ্গি এলাকার কিছু মানুষের সাথে। পঞ্চাশোর্ধ বয়সী এক কৃষক জানান, বাবুল বড় মাপের কালোবাজারি, বাবুলের বাংলাদেশে ম্যানেজার তার বোনের স্বামী জব্বার।
এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে বাধা দেয় আব্দুল জব্বার ও তার পরিবার। তবে, অভিযোগ অসত্য বলেও দাবি করেননি তারা।
মাদক-অস্ত্রের অবৈধ আমদানিকারক রামকৃষ্ণপুরের জব্বার মহাজন সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য আছে কি-না প্রশ্নে দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, অস্ত্র-মাদকে সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হুন্ডির বিষয়টি পুলিশের আওতাভুক্ত নয়।
এ প্রসঙ্গে রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২,কুষ্টিয়া) জানিয়েছেন, বিষয়টি টাস্ক ফোর্স এবং পুলিশ-বিজিবি’র দেখার সুযোগ আছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হবে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post