গোফরান পলাশ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হঠাৎ করে বেড়েছে ডায়রিয়ায়। অসুস্থ রোগীদের দেয়া হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার স্যালাইন। এতে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা। এছাড়া হাসপাতালে ওষুধ সংকট না থাকলেও রোগীদের বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে। হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, ভুলে রোগীদের মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি জানার পরই সকল মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ও ওষুধ সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে শিশুদের জন্য মাত্র ১০ টি বেড রয়েছে। শীত মৌসুম শুরুর পর থেকে উপজেলা জুড়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ছে এ উপজেলায়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কলাপাড়ার পাশাপাশি পাশ্ববর্তী রাঙ্গাবালী, আমতলী ও তালতলী উপজেলা থেকে শতশত রোগী হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসে। চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে এ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু রোগীদের সুস্থ করতে যেখানে সেবিকা ও চিকিৎসকদের সচেতন থাকার কথা উল্টো তাদের দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতায় রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গত দুই দিন ধরে হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের খাবার স্যালাইন দেয়া হলেও তা মেয়াদ উত্তীর্ণ। অধিকাংশ স্যালাইনের মেয়াদ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। পড়ালেখা না জানা রোগীর স্বজনরা এ স্যালাইন রোগীদের খাওয়ানোর কারনে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শুক্রবার দুপুরে স্যালাইন খেয়ে রোগী অসুস্থের বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। দ্রুতই হাসপাতালের কর্মচারীরা রোগীদের কাছ থেকে গোপনে স্যালাইনগুলো সরিয়ে নিয়ে মেয়াদ আছে এমন বক্সে রেখে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
একাধিক রোগীর স্বজনরা জানায়, স্যালাইন খাওয়ানোর পরই শিশুদের বমি ও পেটে ব্যাথা শুরু হয়। শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে। তারা প্রথমে এর কারন বুঝতে না পারলেও পরে স্যালাইনের মেয়াদ উত্তীর্ণের বিষয়টি তাদের চোখে পড়ে। তাৎক্ষণিক তারা হাসপাতালের ডাক্তারদের জানান।
একাধিক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে স্যালাইন ছাড়া আর কোন ওষুধই রোগীদের দেয়া হয় না। প্রেসক্রিপশনের বেশিরভাগ ওষুধ বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিন্তু হয়। টেষ্ট করাতে হয় ডাক্তারদের নির্দেশিত ল্যাব থেকে। আর যে স্যালাইন দেয়া হয়েছে তারও মেয়াদ নেই। তাই বেশিরভাগ রোগী বাহির থেকে স্যালাইন কিনে খাচ্ছে। আর যারা মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন খেয়েছে, তারাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এদিকে গত আট দিনে কলাপাড়া হাসপাতালে ৮১ জনসহ জানুয়ারি মাসে ২৭০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে তাদেরও এ মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেয়া হয়েছে কিনা সেটি তদন্তের দাবি করছেন সচেতন কলাপাড়াবাসী।
এ বিষয়ে কলাপাড়া হাসপাতালের স্টোর ইনচার্জ মোর্শেদ বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনগুলো রোগীদের ভুলে দেয়া হয়েছে। পরে সেগুলো রোগীদের কাছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. জে এইচ খান লেলিন বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন কিংবা ওষুধ খাওয়া রোগীদের জন্য সমস্যা হতে পারে। তবে রোগীদের দেয়া স্যালাইনের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিলো, এটি সেবিকারা খেয়াল করেনি। এটা ভুলে রোগীদের দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জেনে হাসপাতালের স্টোরের সকল মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও স্যালাইন সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারি মাসে কলাপাড়া হাসপাতালের আউটডোরে ৭০১৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১৩৬৫ জন। আর ভর্তি হয়েছে ৮৯২ জন রোগী। এরমধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারি মাসে হাসপাতালে আট জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, অফিস কর্মচারী সহ বিভিন্ন পদে যুগ যুগ ধরে কর্মরত রয়েছেন অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী। তারা একই স্থানে যুগ যুগ ধরে কর্মরত থাকায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে হাসপাতালের অভ্যন্তরে। এতে হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিক্রির জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে বাইরে। বিনামূল্যে কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে তাকে কৌশলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে নিজেদের প্রাইভেট ক্লিনিকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন না হলেও একগাদা পরীক্ষার প্রেসক্রিপশন দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের মালিকানাধীন ক্লিনিকে। হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ ঠিকাদার নিয়োগ সহ সব ঠিকাদার নিয়োগ ও তাদের দায়িত্বহীনতায় বিশ্বাস সেবা প্রত্যাশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post